কাশ্মীরে পর্যটক হামলার পর ৫০টি জনপ্রিয় স্থান বন্ধ ঘোষণা:

কাশ্মীরের পাহালগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার জেরে, ভারত সরকার ৫০টি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা।ছবি: থেইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
পর্যটন স্বর্গে রক্তাক্ত হামলা: পাহালগামে ঘটে যাওয়া বিভীষিকা
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, জম্মু-কাশ্মীরের অনিন্দ্য সুন্দর পাহালগাম এলাকায় যে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে, তা কেবল ভারত নয়, পুরো বিশ্বের নজর কাড়ে। বাইসারান উপত্যকায় যখন পর্যটকরা প্রকৃতির মাঝে অবসর কাটাচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই ২৫ জন পর্যটক ও একজন স্থানীয় বাসিন্দা প্রাণ হারান। আহত হন অনেকে। পাহাড়ি এলাকায় হামলা এবং পালানোর কৌশলে হামলাকারীরা চিহ্নিত না হলেও, নিরাপত্তা বাহিনী প্রাথমিকভাবে লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখাকে দায়ী করেছে।

ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স
কাশ্মীরের ৫০টি গন্তব্যে বন্ধের নির্দেশ: সরকারি নিরাপত্তা কৌশল
হামলার পরই জম্মু-কাশ্মীর ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্ট পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এক বড় সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্যের ৮৭টি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় সেখানে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যেমন: গুরেজ, তসার লেক, মারসার, দোডাপাথরি, ইউসমার্গ ও বাঙ্গুস ভ্যালি। যে স্থানগুলোতে পর্যাপ্ত সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি রয়েছে, সেগুলো খোলা রাখা হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস: সেনা মোতায়েন ও নজরদারির বিস্তার
সরকার হামলার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত বাহিনী পাহালগাম ও সংলগ্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি, চেকপোস্ট বাড়ানো এবং পর্যটকদের চলাচলের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন স্থানীয় গাইড ও পরিবহন সংস্থাগুলোর সাথেও নিয়মিত বৈঠক করছে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া: কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু
এই হামলার ঘটনায় ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে দায়ী করে, এবং রাষ্ট্রসংঘসহ অন্যান্য সংস্থার হস্তক্ষেপ চায়। পাকিস্তান শুরুতে দায় অস্বীকার করলেও, হামলার ধরন ও প্রযুক্তি ব্যবহার দেখে অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করে। ফলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও তলানিতে পৌঁছায়। ভারত ইসলামাবাদে নিযুক্ত কূটনীতিকদের পরামর্শমূলকভাবে দেশে ফিরিয়ে নেয় এবং বেশকিছু চুক্তি স্থগিত করে।
কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পে বিশাল ধস: ক্ষতির মুখে স্থানীয় অর্থনীতি
এই ঘটনার পরপরই কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট বুকিং ব্যাপক হারে বাতিল হয়। মে-জুলাই সময়টিতে কাশ্মীরে পর্যটনের মৌসুম চলে, কিন্তু এই হামলার ফলে হোটেল, রেস্তোরাঁ, হস্তশিল্প বিক্রেতা এবং পরিবহন খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য ও ক্ষতিপূরণ দাবি জানিয়েছে। পূর্ববর্তী বছরগুলোতে যে আয় হয়েছে, এই মৌসুমে তা ৭০% পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি: প্রযুক্তিনির্ভর পর্যটন ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলা
কাশ্মীর সরকার এখন টেকনোলজি-নির্ভর পর্যটন ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকছে। নিরাপত্তার উন্নয়নে GPS ট্র্যাকিং, বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন, পর্যটকদের পূর্বানুমতি নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে। বিশেষ করে বাইসারান, সোনমার্গ, কুপওয়ারা প্রভৃতি দূরবর্তী গন্তব্যে প্রবেশের আগে ড্রোন ক্যামেরা ও সেন্সর ব্যবহার করা হবে। পর্যটকদের তথ্য সংরক্ষণ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রিয়েল টাইম শেয়ার করার পরিকল্পনাও তৈরি করা হচ্ছে।
কাশ্মীরের শান্তি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা
এই হামলা কেবল নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ নয়, কাশ্মীরের মানুষের জীবিকা ও ভারতের ভাবমূর্তিরও চরম হুমকি। ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পর্যটনের ভবিষ্যৎ রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই উদ্যোগ প্রয়োজন।
Indian Express – Kashmir locations closed tourists Pahalgam attack