মেঘনা নদীতে নৌকাডুবিতে একজন নিহত, ৮ জন নিখোঁজ

মেঘনা নদীতে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন এবং এখনো ৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার তৎপরতা চলছে, পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বাড়ছে। ছবিঃ সংগ্রহ
ভয়াবহ নৌকাডুবিতে প্রাণ গেল একজনের, নিখোঁজ আরও আট
মেঘনা নদীতে একটি যাত্রীবাহী নৌকা উল্টে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় এক যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং অন্তত আটজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকেলে, যখন অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে একটি ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা নদী পার হচ্ছিল। হঠাৎ করেই নৌকাটি ভারসাম্য হারিয়ে উল্টে যায় এবং যাত্রীরা পানিতে পড়ে যান। নদীর স্রোত তীব্র হওয়ায় অনেকেই নিজে নিজে তীরে উঠতে পারেননি।
ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা, নিখোঁজদের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিস
নৌকাডুবির খবর পাওয়ার পরপরই ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তীব্র স্রোত ও নদীর গভীরতা উদ্ধারকাজকে জটিল করে তুলেছে। এখন পর্যন্ত একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, তবে নিখোঁজদের সন্ধানে ডুবুরি দল তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্ধারকারী দলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যতক্ষণ না নিখোঁজ প্রত্যেককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নৌকাটিতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ছিলেন। সাধারণত ১২-১৫ জন ধারণক্ষমতার নৌকায় প্রায় ২৫ জন যাত্রী ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে এটি হঠাৎ উল্টে যায়। দুর্ঘটনার পর আশপাশের নৌকা ও জেলেরা দ্রুত এগিয়ে এলেও অনেকেই পানির গভীরে তলিয়ে যান। নদী এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় এমন দুর্ঘটনা প্রায়শই ঘটে চলেছে।
পরিবারগুলোর আহাজারি ও আতঙ্ক
নিখোঁজদের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই নদীর তীরে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন, আবার অনেকে সংবাদ সংগ্রহে ছুটছেন হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস ক্যাম্পে। নিখোঁজদের বেশিরভাগই স্থানীয় কৃষক ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ, যারা প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পরিবারগুলোর দাবি, নৌপথে নিরাপত্তার ঘাটতি ও তদারকির অভাবই এই ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
নদীপথে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে
এই ঘটনার পর আবারও নদীপথে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছোট নৌকাগুলোতে নিয়মিতই অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হয় এবং নিরাপত্তা সরঞ্জামের তেমন কোনো ব্যবস্থা থাকে না। অনেক ক্ষেত্রেই নৌকার চালকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন এবং নদীর আবহাওয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণা না নিয়েই যাত্রী পরিবহন করেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে ও স্রোত প্রবল থাকাকালীন সময় এসব ছোট নৌকায় যাত্রী পরিবহন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে কাজ চলছে। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, যারা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হবে।