রাজধানীর জামুনা ও সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজধানীর জামুনা ফিউচার পার্ক ও সচিবালয়ের আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ছবি: ডেইলি অবসাবের

রাজধানীতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

ঢাকা মহানগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুই অঞ্চল—জামুনা ফিউচার পার্ক ও সচিবালয় এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। শনিবার দুপুরে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ডিএমপি এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। মূলত জননিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকাণ্ড সুরক্ষিত রাখতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

আইনি ভিত্তিতে নেওয়া পদক্ষেপ

ডিএমপি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ২৯(চ) ধারা অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই ধারার আওতায় পুলিশ কমিশনারের কাছে ক্ষমতা থাকে, জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে তিনি যে কোনো এলাকায় সমাবেশ বা জনসমাগম নিষিদ্ধ করতে পারেন। এই সিদ্ধান্ত তাত্ক্ষণিক কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

নিরাপত্তা হুমকির আশঙ্কা

সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের মিছিল ও বিক্ষোভের ঘোষণা থাকায় প্রশাসন আগেভাগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে সচিবালয়ের চারপাশে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তাদের চলাচল, দাফতরিক কাজ ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইভাবে, জামুনা ফিউচার পার্কের এলাকায় সাধারণ জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি থাকে এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলেই মনে করছে প্রশাসন।

নিষেধাজ্ঞার এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। সরকারপন্থী দলসমূহ এটিকে একটি সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত বলে সমর্থন করছে। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন সিদ্ধান্ত জনসাধারণের অধিকার সীমিত করতে পারে, বিশেষ করে যদি এই নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘস্থায়ী হয়।

 ঢাকা মহানগর

ছবি: ডেইলি ষ্টার

জনসাধারণকে সতর্কবার্তা

ডিএমপির পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণকে এই নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। কেউ নির্দেশ অমান্য করে সমাবেশ আয়োজন করলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

জামুনা ফিউচার পার্ক দেশের অন্যতম বড় শপিং মল হওয়ায় এই এলাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসেন কেনাকাটা ও বিনোদনের উদ্দেশ্যে। নিষেধাজ্ঞার ফলে ওই এলাকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও সাধারণ মানুষের চলাচল প্রভাবিত হতে পারে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল, যাতে ক্ষতি কমানো সম্ভব হতো।

অতীতেও নিষেধাজ্ঞার নজির

ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পূর্বেও সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সচিবালয় ও প্রেসক্লাব এলাকায় রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই প্রশাসন আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, মতপ্রকাশের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার, এবং তা প্রয়োগে প্রশাসনকে আরও সংবেদনশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। একইসঙ্গে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের সুযোগ না থাকলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সময় এ ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত আরও দেখা যেতে পারে। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা জরুরি, যাতে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক অধিকারও সুরক্ষিত থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *