মৈত্রী যাত্রায় লিঙ্গ সমতার আহ্বান, মানিক মিয়া এভিনিউয়ে হাজারো মানুষের সমাবেশ

লিঙ্গ সমতা

মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত মৈত্রী যাত্রায় লিঙ্গ সমতার পক্ষে ব্যাপক জনসমাগম হয়। নারী-পুরুষ সমতার প্রয়োজনীয়তা এবং সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়। বিস্তারিত পড়ুন। ছবি: ষ্টার

মৈত্রী যাত্রা: লিঙ্গ সমতার জন্য গণজাগরণের আহ্বান

সম্প্রতি মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত মৈত্রী যাত্রায় হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে লিঙ্গ সমতার পক্ষে শক্তিশালী বার্তা প্রদান করেছে। এই যাত্রা কেবল একটি প্রতিবাদ নয়, বরং দেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে। মৈত্রী যাত্রার সংগঠকরা বারংবার জোর দিয়ে বলেছেন, লিঙ্গ সমতা শুধু নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা নয়, এটি সমাজের সার্বিক উন্নয়নের মাপকাঠিও বটে।

বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বেই লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য এখনো একটি গভীর সমস্যা। কাজের জায়গা থেকে শুরু করে শিক্ষার ক্ষেত্র পর্যন্ত নারীরা বহু বাধার সম্মুখীন। এই বাস্তবতা দূর করতে লিঙ্গ সমতার দাবি আজকাল আরও জোরালো হচ্ছে। মৈত্রী যাত্রার মাধ্যমে তরুণ, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই একযোগে এই প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছে, যাতে সামাজিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা যায়। লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা না হলে দেশে প্রকৃত অর্থে উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে তারা মনে করেন।

মানিক মিয়া এভিনিউয়ের জনস্রোত: একটি ঐতিহাসিক দৃশ্য

মৈত্রী যাত্রার সময় মানিক মিয়া এভিনিউ ব্যাপক জনসমাগমে পরিণত হয়। হাজার হাজার নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী ও বয়স্করা লিঙ্গ সমতার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মজীবী প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ নাগরিকরা একত্রিত হয়ে এই যাত্রাকে সফল করেছে। এ ধরনের সমাবেশ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণের জন্য একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মৈত্রী যাত্রা শুধু একটি মিছিল নয়, এটি ছিল এক দীর্ঘ পথচলা যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বক্তৃতা ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতার প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে। বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে সমাজে লিঙ্গ সমতা নিয়ে সচেতনতা এবং মনোভাবের পরিবর্তন সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন।

নারীর ক্ষমতায়নে লিঙ্গ সমতার গুরুত্ব

নারীর ক্ষমতায়ন হলো লিঙ্গ সমতার অন্যতম মুখ্য দিক। মৈত্রী যাত্রায় এই বিষয়টিকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন, আইনগত সুরক্ষা এবং আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই নারীর ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি বলে বক্তারা উল্লেখ করেছেন। লিঙ্গ সমতার আওতায় নারীরা যাতে বাধা ছাড়া এগিয়ে যেতে পারে, সে জন্য রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়ের সহযোগিতা জরুরি বলে মনে করছেন যাত্রার সংগঠক ও অংশগ্রহণকারীরা।

মৈত্রী যাত্রায় উপস্থিত তরুণরা লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্বকে স্বীকার করেছে। তারা বিশ্বাস করে, সমাজের পরিবর্তন আসবে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। নারী-পুরুষ সমান অধিকার, সুযোগ এবং সম্মান পেতে হলে যুব সমাজকে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই মঞ্চ থেকে তরুণদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো সমাজের জন্য এক নতুন দিশা নির্দেশ করে।

সামাজিক প্রতিরোধ ও লিঙ্গ সমতা বাস্তবায়ন

যদিও বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তবে সামাজিক বাধা ও পারিবারিক প্রতিরোধ এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। মৈত্রী যাত্রার আলোচনায় এই বাস্তবতাও উঠে এসেছে। অনেক পরিবার এখনও নারীর স্বাধীনতায় বাধা দেয় বা তাদের সম্ভাবনাকে অবমূল্যায়ন করে। তাই এই যাত্রা থেকে উঠে এসেছে সামাজিক মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান, যা লিঙ্গ সমতা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ।

মৈত্রী যাত্রায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও নীতিনির্ধারকদের কাছে লিঙ্গ সমতা সংক্রান্ত শক্তিশালী আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য ও অন্যায় নিরসনে কড়া আইন প্রয়োগ অপরিহার্য বলে উল্লেখ করা হয়। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নারীর অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রের আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা এই যাত্রায় তুলে ধরা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *