অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বান: সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করুন

মুহাম্মদ ইউনূস

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেন। এই আহ্বান সামাজিক দায়িত্ব পালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। ছবিঃ বিএসসি

ইউনূসের মানবিক বার্তা

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি চিকিৎসকদের প্রতি এক আবেগঘন আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা এমন একটি মৌলিক অধিকার, যা প্রতিটি নাগরিকের প্রাপ্য, এবং এটি নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি বিশেষভাবে বলেন, ধনী ও দরিদ্রের মাঝে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যেন বৈষম্য না থাকে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ যেনও ন্যায্য চিকিৎসাসেবা পায়, সেটাই হওয়া উচিত আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

সামাজিক ব্যবসার দর্শন এবং স্বাস্থ্যসেবা

ড. ইউনূস তার বক্তব্যে তার “সামাজিক ব্যবসা” দর্শনের কথা তুলে ধরেন, যেখানে ব্যবসার লক্ষ্য শুধুমাত্র মুনাফা নয়, বরং মানুষের কল্যাণ। এই দর্শনের ভিত্তিতে, স্বাস্থ্যসেবাকেও একটি সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, “যে চিকিৎসক শুধুই অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করেন, তিনি সমাজের প্রতি দায়িত্ব পূরণ করছেন না। আমাদের এমন একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যা মানবিকতা, সহানুভূতি এবং সমতা ভিত্তিক হবে।

চিকিৎসকদের ভূমিকায় পরিবর্তনের ডাক

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, চিকিৎসকদের উচিত নিজেদের ‘সেবক’ হিসেবে ভাবা, যেখানে তারা শুধু রোগ নিরাময় করবেন না, বরং একজন সামাজিক নেতৃত্বের ভূমিকাও পালন করবেন। তিনি মনে করেন, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতাও জরুরি।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, যদি একজন গরিব রোগী সঠিক চিকিৎসা না পায় শুধুমাত্র টাকার অভাবে, তবে সেটা সমাজের জন্য চরম ব্যর্থতা। তিনি চিকিৎসকদের উৎসাহ দেন, যেন তারা জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন এবং সময়ের একটি অংশ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় ব্যয় করেন।

স্বাস্থ্যসেবা খাতের বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাত এখনও বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের আয়সীমার বাইরে। এই অবস্থায় অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্য স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।

তিনি বলেন, “একের অধিক হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ বা ক্লিনিক শুধুমাত্র ধনীদের জন্য নয়— সকল শ্রেণির মানুষ যাতে মানসম্মত চিকিৎসা পায়, সে ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে।

স্বাস্থ্য নীতিমালা

ছবিঃ বিএসসি

ইউনূস ফাউন্ডেশনের স্বাস্থ্য প্রকল্প

ড. ইউনূস তাঁর প্রতিষ্ঠিত “ইউনূস ফাউন্ডেশন” এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্প নিয়েও কথা বলেন। বিশেষ করে গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, মাতৃসেবা কার্যক্রম এবং মাইক্রো-ইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন তিনি।

তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক ব্যবসার সমন্বয়ে এমন একটি মডেল গড়ে তুলেছে, যেটা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশেও অনুসরণযোগ্য হতে পারে। তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এই কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

ভবিষ্যৎ ভাবনা ও চিকিৎসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

অধ্যাপক ইউনূস মনে করেন, চিকিৎসকদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসা শুধুই একটি পেশা নয়— এটি একটি ব্রত, যা সমাজে ন্যায়বিচার ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠা করে।

তিনি বলেন, “যে চিকিৎসক ভালো মানুষ নন, তিনি একজন ভালো চিকিৎসক হতে পারেন না। মানবিকতাই চিকিৎসাবিদ্যার মূলভিত্তি হওয়া উচিত।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *