অন্ধ্রপ্রদেশে কেন্দ্রীয় সহায়তা কমায় আত্মনির্ভরতার ডাক চন্দ্রবাবু নাইডুর

কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্য হ্রাস পাওয়ায় চন্দ্রবাবু নাইডু আত্মনির্ভর অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। রাজস্ব বৃদ্ধির রূপরেখা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন। ছবিঃ ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
কেন্দ্রীয় অনুদান হ্রাস ও অন্ধ্রপ্রদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ সাম্প্রতিক সময়ে এক কঠিন আর্থিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যে যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হতো, তা বিগত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই অনুদান কমার ফলে রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি খাত, শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এ প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “যদি আমরা কেবল কেন্দ্রের দয়ার উপর নির্ভর করি, তাহলে অন্ধ্রপ্রদেশ কখনোই দীর্ঘমেয়াদে এগিয়ে যেতে পারবে না।” এই হুঁশিয়ারির মধ্য দিয়ে তিনি একটি নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতার দিকে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
আত্মনির্ভর অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের লক্ষ্য ও কৌশল
চন্দ্রবাবু নাইডু এই সংকটকে চ্যালেঞ্জ না ভেবে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি আত্মনির্ভর অন্ধ্রপ্রদেশ গঠনের জন্য একটি সুদূরপ্রসারী কৌশল প্রণয়ন করেছেন, যার ভিত্তি হবে রাজ্যের নিজস্ব সম্পদ, মানবশক্তি ও প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন। কৃষি খাতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার এবং পর্যটন শিল্পে বিদেশি ও দেশীয় বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে রাজ্যকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা যদি প্রত্যেকটি অঞ্চলের স্থানীয় শক্তিকে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে পুরো রাজ্য একটি আত্মনির্ভর অর্থনৈতিক গন্তব্যে রূপ নিতে পারে।”
নতুন বাজেট পরিকল্পনা, রাজস্ব বৃদ্ধি ও খরচ নিয়ন্ত্রণের কৌশল
মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় উঠে এসেছে রাজ্য বাজেট পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি। সরকারি ব্যয়ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে চন্দ্রবাবু নাইডু প্রশাসনিক খরচ কমানোর কথা বলেছেন, যাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করে সেই অর্থ জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে ব্যয় করা যায়। তিনি রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সম্পদ কর সংস্কার, রাজ্য মালিকানাধীন জমির উন্নয়নমূলক ব্যবহার এবং সরকারি সেবার ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন যে, রাজ্যে ‘প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ’ (PPP) মডেলকে উৎসাহিত করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। এটি কেবলমাত্র রাজস্ব ঘাটতি কমাবে না, বরং কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি করবে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিরোধীদের সমালোচনা
তবে চন্দ্রবাবুর আত্মনির্ভরতা ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি এই উদ্যোগকে একটি “দুর্বল অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আড়ালে লুকানো রাজনৈতিক প্রচারণা” বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের অভিযোগ, কেন্দ্রের সঙ্গে সঠিক সমন্বয় না থাকার কারণে অন্ধ্রপ্রদেশ নিয়মিতভাবে আর্থিক অনুদান হারাচ্ছে। তারা আরও দাবি করে, চন্দ্রবাবুর প্রশাসনে গত মেয়াদেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, যা আজ রাজ্যকে এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী এই অভিযোগের কড়া জবাব দিয়ে বলেন, “সমালোচনার সময় নয়, এখন কাজ করার সময়। জনগণ আমাদের দিকে চেয়ে আছে, তাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে।”

ছবিঃ ইকোনমিক টাইমস
জনগণের মতামত ও ভবিষ্যতের প্রত্যাশা
রাজ্যের জনগণ চন্দ্রবাবুর এই আত্মনির্ভর অভিযানের প্রতি আগ্রহী হলেও, অনেকের মধ্যেই রয়েছে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়। অনেক সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এটি একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি হলেও, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গ্রামের মানুষদের জন্য কৃষি-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, শহরাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র স্থাপন এবং নতুন ব্যবসা শুরু করার জন্য সহজ লোন সুবিধার আশ্বাস দিলেও, তা কতটা কার্যকর হবে তা সময়ই বলবে। তবে তরুণ প্রজন্মের একাংশ মনে করছে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে উঠে অন্যদের কর্মসংস্থান দিতে পারবে। সেই অর্থে এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক পরিবর্তনেরও এক যুগান্তকারী সুযোগ।
প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন ও স্টার্টআপ সংস্কৃতির প্রসার
চন্দ্রবাবু নাইডু বরাবরই প্রযুক্তির ব্যবহারকে রাজ্য প্রশাসনের মূল স্তম্ভ হিসেবে দেখতে চান। তিনি নতুন প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করছেন, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), বিগ ডেটা এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং গতি আনা হবে। শিক্ষিত তরুণ সমাজের মধ্যে স্টার্টআপ সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ‘ইনোভেশন হাব’, ‘স্টার্টআপ ইনকিউবেশন সেন্টার’ এবং ‘টেক পার্ক’ গড়ে তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের মতে, এই উদ্যোগগুলির মাধ্যমে অন্ধ্রপ্রদেশ কেবল জাতীয় পর্যায়েই নয়, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিখাতেও নিজস্ব অবস্থান গড়ে তুলতে পারবে।