বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হবে বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস পালন করবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও এ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরা হবে। ছবিঃ সংগ্রহ
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস পালিত হবে বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে যাচ্ছে, যা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। প্রতি বছর ২৯ মে এই দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত প্রাণোৎসর্গকারী সদস্যদের সম্মান জানাতে এই দিনটি গুরুত্বের সাথে উদযাপিত হয়। বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম প্রধান অবদানকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এই দিবসটি তারই প্রতিফলন।
বাংলাদেশ ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছে এবং আজ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫৫টিরও বেশি মিশনে অংশ নিয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭,৫০০ এর বেশি শান্তিরক্ষী সদস্য বিভিন্ন দেশে মোতায়েন আছেন। তাদের অবদান কেবল নিরাপত্তা নয়, বরং স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নেও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
দিবসটির তাৎপর্য এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিফলন
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস শুধুমাত্র একটি স্মরণ দিবস নয়, এটি একটি আত্ম-উপলব্ধির ও গর্বের উপলক্ষ। বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিযুক্ত দেশগুলো এই দিনে তাদের শান্তিরক্ষী সদস্যদের আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে। বাংলাদেশও এ দিবসে শহীদ শান্তিরক্ষীদের শ্রদ্ধা জানায় এবং জীবিত শান্তিরক্ষীদের কৃতিত্বকে উৎসাহিত করে। জাতিসংঘ এই দিবসে থিম নির্ধারণ করে যার আলোকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।এ বছর দিবসটি ঘিরে বাংলাদেশে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকার সেনানিবাস, জাতিসংঘ তথ্যকেন্দ্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নানা আয়োজন রয়েছে। সকাল থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শান্তিরক্ষীদের সম্মানে মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এতে অংশ নেবেন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পাঠ করে শোনানো হবে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য বিশেষ অভ্যর্থনা ও স্বীকৃতি প্রদানেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ পরিচিত ও প্রশংসিত। তারা তাদের পেশাগত দক্ষতা, ধৈর্য্য ও মানবিক গুণাবলির মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য অঞ্চলে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের মানবিক কাজ ও প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম প্রশংসা কুড়িয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবও একাধিকবার বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেছেন এবং বাংলাদেশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
নারী শান্তিরক্ষীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণও দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে। নারীদের এই অংশগ্রহণ কেবল জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (SDGs) অংশ নয়, বরং এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠায় নারীদের অনন্য অবদানকেও তুলে ধরছে। বর্তমানে নারী পুলিশ সদস্য ও চিকিৎসকরা শান্তিরক্ষা মিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, যা নারীর ক্ষমতায়নের দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।