আয়করে ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজারে কর অব্যাহতি

ট্যাক্স ফ্রি ইনকাম

আগামী বাজেটে আয়করে ছাড়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য কর ছাড়ের ঘোষণা আসছে। বিস্তারিত জানুন নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সম্পর্কে। ছবিঃ প্রথম অলো

নতুন বাজেটে আয়করে ছাড়ের সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

আসন্ন অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘিরে সাধারণ জনগণের মধ্যে যেমন আগ্রহ বেড়েছে, তেমনি সরকারও বেশ কিছু বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে করনীতিতে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, আয়করে ছাড়ের সীমা বৃদ্ধি। বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা হলেও, নতুন বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৩.৫ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার কথা ভাবা হচ্ছে। সরকার মনে করছে, চলমান মূল্যস্ফীতি ও নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে নাগরিকদের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তাই এই ছাড় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর মাধ্যমে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ নতুন করে আর্থিক পরিকল্পনা করতে পারবে এবং অর্থনৈতিকভাবে আরও সচল হবে।

মধ্যবিত্ত শ্রেণির উপর চাপ কমাতে সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ

বিগত কয়েক বছর ধরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় যেমন স্থবির রয়েছে, তেমনি তাদের ব্যয় প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। পরিবারের দৈনন্দিন ব্যয়, শিশুদের শিক্ষা খরচ, চিকিৎসা সেবা এবং আবাসনের মতো মৌলিক চাহিদাগুলো এখন অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এই পরিস্থিতিতে সরকার যদি আয়করে ছাড়ের সীমা না বাড়াতো, তাহলে এই শ্রেণির মানুষ করজালে পড়ে আরও বিপাকে পড়তো। বাজেটে এমন একাধিক প্রস্তাব আসছে যেখানে নির্দিষ্ট পেশাজীবীদের জন্য বিশেষ কর রেহাই দেওয়া হবে। শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী এবং সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আলাদা ছাড় আনার চিন্তা চলছে। এতে করে এই গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবীরা আরও উৎসাহ পাবেন এবং দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখবেন।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে কর অব্যাহতির পরিকল্পনা

পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে সরকার কর অব্যাহতির নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা শেয়ারবাজারে অন্তত এক বছরের জন্য বিনিয়োগ ধরে রাখবেন, তাদের সেই আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত করার চিন্তা চলছে। এ ধরনের পরিকল্পনা মূলত দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এবং তা দেশের পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী ও স্বচ্ছ করবে। সরকার মনে করে, যদি বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত থাকেন যে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে করের ঝামেলা নেই, তাহলে তারা আরও বেশি করে শেয়ার বাজারে সম্পৃক্ত হবেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

তরুণ উদ্যোক্তা ও নতুন ব্যবসার জন্য বিশেষ কর ছাড়

তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে থাকছে আলাদা স্বস্তির বার্তা। স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান, ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য কর অব্যাহতির পরিধি বাড়ানো হচ্ছে। যারা বার্ষিক ৫ লাখ টাকার কম আয় করেন, তাদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কর ছাড়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এমনকি প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কর রেহাই দেওয়া হতে পারে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে—নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করা। এই কর নীতির কারণে তরুণরা চাকরির পরিবর্তে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রতি আগ্রহী হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজস্ব ভারসাম্য বজায় রাখতে বিকল্প কৌশল

যদিও আয়করে ছাড় এবং পুঁজিবাজারে কর অব্যাহতির ফলে সরাসরি রাজস্ব আদায় কমে যেতে পারে, তবে সরকার বিকল্প উপায়ে এই ঘাটতি পূরণের কৌশল নিচ্ছে। উচ্চ আয়ভোগী ব্যক্তি ও বড় প্রতিষ্ঠানের ওপর কর হার সামান্য বাড়ানো হতে পারে, বিশেষ করে বিলাসপণ্য ব্যবহারকারী ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ওপর। তাছাড়া, কর ফাঁকি রোধে তথ্যভিত্তিক অডিট পদ্ধতি আরও উন্নত করা হবে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ন্যায্যভাবে কর আদায় নিশ্চিত করা এবং করের বোঝা সাধারণ মানুষের ওপর না চাপিয়ে দেওয়া।

কর ব্যবস্থায় প্রযুক্তি ও স্বচ্ছতার উন্নয়ন

বাজেটের অন্যতম দিক হচ্ছে কর ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও প্রযুক্তি-নির্ভর করা। বর্তমানে অনলাইন কর দাখিল ব্যবস্থা অনেকটা সফল হলেও, ভবিষ্যতে এটি আরও আধুনিক করা হবে। করদাতাদের অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে, পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই কর হিসাব, পেমেন্ট ও অডিট ট্র্যাক করা যাবে। এতে হয়রানি কমবে, স্বচ্ছতা বাড়বে এবং কর দেওয়ার প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে। সরকার মনে করছে, এই ডিজিটাল কর ব্যবস্থাই ভবিষ্যতের জন্য টেকসই কর সংস্কৃতির পথপ্রদর্শক হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *