আরাফাত ময়দানে হজের শীর্ষ আনুষ্ঠানিকতা পালিত

আরাফাত ময়দানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছেন লাখো মুসলিম। আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও শান্তির জন্য দোয়ায় মুখর ছিল গোটা ময়দান। ছবিঃ এএফপি
আরাফাত ময়দানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন
প্রতি বছর পবিত্র জিলহজ মাসের ৯ তারিখে হজের সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হিসেবে মুসলিম তীর্থযাত্রীরা আরাফাত ময়দানে অবস্থান করে ‘ওকুফে আরাফাত’ পালন করেন। মক্কা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ময়দানটি ইসলামের ইতিহাসে এবং হজের রীতিনীতিতে এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মুসলিমদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনটিই হল সেই দিন যেদিন আল্লাহ তা’আলা হজ পালনকারীদের গুনাহ মাফ করে দেন এবং তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ দেন। তীর্থযাত্রীরা ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করে নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত এবং আন্তরিক দোয়ায় মগ্ন থাকেন। এখানে লাখো মানুষের একত্রিত হয়ে একই প্রার্থনায় লিপ্ত হওয়া ইসলামি ঐক্যের অনন্য উদাহরণ।
হৃদয়বিদারক দোয়ায় ভরে উঠল আরাফাত
সাদা ইহরামে মোড়ানো হাজার হাজার মানুষ যখন আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন সেই দৃশ্য সত্যিই অভূতপূর্ব। কেউ চোখের পানি ফেলছে, কেউ কাঁদছে নিজের জীবনের ভুলের জন্য, আবার কেউ প্রিয়জনদের জন্য জান্নাত কামনা করছে। এই দিনটি যেন আত্মশুদ্ধির একটি বিশেষ সুযোগ এনে দেয়, যেখানে একজন মুসলমান পৃথিবীর সব বৈষয়িক মায়া ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর দিকে ফিরে যান। তারা অনুতপ্ত হৃদয়ে দোয়া করে বলেন, “হে আল্লাহ! আমাদের মাফ করে দিন, আমাদের দয়া করুন, আমাদেরকে হেদায়েত দিন।” নানা ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষ একত্রে দাঁড়িয়ে এক আল্লাহর সামনে মাথা নত করে থাকেন—এটাই ইসলামের বিশ্বজনীনতা ও আত্মিক ঐক্যের প্রতিচ্ছবি।
হৃদয়বিদারক দোয়ায় ভরে উঠল আরাফাত
সাদা ইহরামে মোড়ানো হাজার হাজার মানুষ যখন আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে একসাথে দাঁড়িয়ে থাকেন, তখন সেই দৃশ্য সত্যিই অভূতপূর্ব। কেউ চোখের পানি ফেলছে, কেউ কাঁদছে নিজের জীবনের ভুলের জন্য, আবার কেউ প্রিয়জনদের জন্য জান্নাত কামনা করছে। এই দিনটি যেন আত্মশুদ্ধির একটি বিশেষ সুযোগ এনে দেয়, যেখানে একজন মুসলমান পৃথিবীর সব বৈষয়িক মায়া ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর দিকে ফিরে যান। তারা অনুতপ্ত হৃদয়ে দোয়া করে বলেন, “হে আল্লাহ! আমাদের মাফ করে দিন, আমাদের দয়া করুন, আমাদেরকে হেদায়েত দিন।” নানা ভাষা, জাতি ও সংস্কৃতির মানুষ একত্রে দাঁড়িয়ে এক আল্লাহর সামনে মাথা নত করে থাকেন—এটাই ইসলামের বিশ্বজনীনতা ও আত্মিক ঐক্যের প্রতিচ্ছবি।
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক
আরাফাত ময়দানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা কেবল একটি ধর্মীয় রীতিই নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের অনন্য প্রতীক। এখানে ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সবাই একই পোশাকে, একই নিয়মে, একই ইবাদতে অংশ নেন। এটি একটি বিরল দৃশ্য, যেখানে কোনো সামাজিক বৈষম্য নেই, নেই কোনো ক্ষমতার প্রতিযোগিতা। এই দিনটি যেন আমাদের শিক্ষা দেয়, আমরা সকলেই মানুষ, আল্লাহর বান্দা—এটাই আমাদের একমাত্র পরিচয়। বৈশ্বিক মুসলিম সমাজের জন্য এটি একটি বার্তা: একতা, সহনশীলতা এবং শান্তির পথে এগিয়ে চলা ইসলামের মূল দর্শন।

ছবিঃ ফ্রান্স ২ ৪
কোভিড ও জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যেও অব্যাহত হজ
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, চরম গরম এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এ বছর হজে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল অসাধারণ উদ্দীপনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পূর্ণমাত্রায় হজ চালু হওয়ায় মুসলিমদের মাঝে দেখা গেছে গভীর আবেগ ও কৃতজ্ঞতা। হাজার হাজার হাজি প্রচণ্ড গরমে পিপাসার্ত অবস্থায়ও আল্লাহর রাস্তায় ধৈর্য ও ইমানের পরিচয় দিয়েছেন। সৌদি সরকার হাজিদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশাল প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পানি সরবরাহ, ছায়ার ব্যবস্থা, চিকিৎসা দল ও মোবাইল ক্লিনিক। এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও মুসলিমরা প্রমাণ করেছেন, ঈমানের শক্তি পৃথিবীর সব সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পারে।
নারী হাজিদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়
আধুনিক হজ ব্যবস্থাপনায় নারীদের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে অনেক বেশি। নারীরা পুরুষদের মতোই আরাফাত ময়দানে অবস্থান করেন, দোয়া করেন এবং ইবাদতে অংশ নেন। তাদের জন্য পৃথক জায়গা, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। অনেক নারী এবার এককভাবেও হজে অংশগ্রহণ করেছেন, যা ইসলামি শিক্ষার আলোকে একটি অগ্রগতি হিসেবেই বিবেচিত। নারী হাজিরা তাদের পর্দা রক্ষা করেই সকল হজের কার্যক্রমে সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, ইসলাম নারীকে কেবল সম্মানই দেয়নি, বরং তাদেরকে পূর্ণ স্বাধীনতার সঙ্গে ইবাদতের সুযোগও দিয়েছে।
হজ শেষে মুজদালিফা গমন ও কঙ্কর সংগ্রহ
আরাফাত থেকে মুজদালিফায় রওনা দেওয়ার মধ্য দিয়ে হাজিদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে প্রবেশ ঘটে। সূর্যাস্তের পর হাজিরা মুজদালিফায় পৌঁছে রাতে অবস্থান করেন এবং সেখানে মাগরিব ও ইশার নামাজ একত্রে আদায় করেন। মুজদালিফার ময়দানে রাত কাটানোর উদ্দেশ্য হলো ধৈর্য, শৃঙ্খলা এবং আত্মত্যাগের চর্চা। এখান থেকেই তাঁরা কঙ্কর সংগ্রহ করেন, যা পরদিন মিনায় জামারাতে শয়তানকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়। এটি প্রতীকীভাবে মানুষের ভেতরে থাকা খারাপ গুণাবলিকে পরাজিত করার এক শিক্ষা বহন করে।