“আলোচনার জন্য শাহবাগে যেতে হবে কেন?”

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন কেন রাজনৈতিক আলোচনার জন্য শাহবাগে যেতে হবে। এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। ছবিঃ প্রথম আলো
সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য: বিতর্কের সূচনা
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি এক আলোচনায় মন্তব্য করেছেন, “আলোচনার জন্য আমাদের শাহবাগে যেতে হবে কেন?” তার এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, রাজনৈতিক আলোচনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান নির্ধারণের প্রয়াস গণতান্ত্রিক চর্চাকে সংকুচিত করে এবং পক্ষপাতমূলক আচরণের প্রতিফলন ঘটায়।
শাহবাগ অঞ্চলটি বাংলাদেশে নানা আন্দোলন, প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতীকী স্থান হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের পর থেকে এটি কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর জন্য আদর্শ অবস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রশ্ন তুলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক আলোচনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো “আদর্শ স্থান” থাকা কি উচিত?
রাজনৈতিক বৈষম্যের অভিযোগ বিএনপির
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে, তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সরকার বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। সালাহউদ্দিনের বক্তব্যও সেই একই অভিযোগের সম্প্রসারণ। তিনি বলেন, “আমরা যদি আমাদের কথা বলি, তবে কেন তা বৈধ নয়, অথচ অন্যরা শাহবাগে বললে তা উৎসাহিত করা হয়?” এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনীতিতে সমান সুযোগ-সুবিধার প্রশ্ন তুলেছেন।
সরকার দলীয় নেতারা অবশ্য এই বক্তব্যকে ‘অহেতুক বিভ্রান্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা দাবি করেছেন, শাহবাগের মতো স্থানে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জড়ো হয়ে মত প্রকাশ করে—এটা সরকারের হস্তক্ষেপে নয়। তাছাড়া বিএনপিকেও তাদের বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, তবে তা যেন আইন-শৃঙ্খলার বাইরে না যায়।
সংলাপের সম্ভাবনা ও রাজনৈতিক পরিবেশ
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি অর্থবহ সংলাপের দাবি বহুদিনের। তবে কবে, কোথায় এবং কিভাবে সংলাপ হবে, তা নিয়ে সব পক্ষের মধ্যে মতানৈক্য রয়ে গেছে। সালাহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, বিএনপি আলোচনার জন্য নিরপেক্ষ, রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য পরিবেশ দাবি করছে।
নাগরিক সমাজের সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে সরকার ও বিরোধী দলের উচিৎ একটি জাতীয় সংলাপের পথ খোলা রাখা। কারণ, যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মতপার্থক্য থাকবেই, তবে তার সমাধান হতে হবে আলোচনার মাধ্যমে, শক্তির মাধ্যমে নয়। শাহবাগ হোক বা অন্য কোনো স্থান—মূল বিষয় হলো, সবাই যেন কথা বলার সমান সুযোগ পায়।
অতীত ইতিহাসে রাজনৈতিক স্থান নির্ধারণ
বাংলাদেশে রাজনীতির ইতিহাসে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থান রাজনৈতিক আইকন হয়ে উঠেছে। যেমন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, প্রেস ক্লাব, পল্টন ময়দান। শাহবাগ সেই ধারাবাহিকতায় একটি সাম্প্রতিক প্রতীক। তবে সেই প্রতীককে কেন্দ্র করে অন্যদের মতপ্রকাশের অধিকার সীমিত করে ফেলা হলে তা গণতন্ত্রের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সালাহউদ্দিন আহমেদের এই প্রশ্ন রাজনীতির বাইরের দৃষ্টিভঙ্গিতে সামান্য হলেও বড় একটি বার্তা বহন করে—গণতন্ত্র মানে হচ্ছে অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা, যেখানে প্রত্যেকের কণ্ঠস্বর গুরুত্ব পাবে। রাজনৈতিক আলোচনার জন্য স্থান নয়, বরং বিশ্বাসযোগ্যতা, সমতা এবং সহনশীলতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।