শান্তি আনতে বিশ্বশক্তিগুলোর প্রস্তাব ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

রাশিয়া যুদ্ধের অবসানে কী বলছে কিয়েভের মিত্র ও বিরোধীরা? জানুন শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন দেশের প্রস্তাব, অবস্থান ও কূটনৈতিক অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত। ছবি: লেমন্ডে
ইউক্রেনের ১০ দফা শান্তি পরিকল্পনা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি ১০ দফা শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে:
- রাশিয়ান সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার
- সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা
- যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি
- পরমাণু নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
- আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা গ্যারান্টি
এই পরিকল্পনাটি ইউক্রেনের মিত্রদের দ্বারা সমর্থিত হলেও, রাশিয়া এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এটি গ্রহণ করেনি।
রাশিয়ার অবস্থান
রাশিয়া একটি ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, যা মে মাসের ৮ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর হবে। তবে, ইউক্রেন এই প্রস্তাবকে প্রতীকী ও অপ্রতুল বলে মনে করছে এবং অন্তত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে।
রাশিয়া ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা, ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া, এবং দখলকৃত অঞ্চলগুলোর স্বীকৃতি চায়। এই শর্তগুলো ইউক্রেনের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধের অবসানে দ্রুত সমাধান চান। তিনি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা ইউক্রেনের জন্য অগ্রহণযোগ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, তবে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিভঙ্গি
ইউরোপীয় দেশগুলো, বিশেষ করে ফ্রান্স, জার্মানি, এবং যুক্তরাজ্য, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা সমর্থন করে। তারা ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়ার পক্ষে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন এবং ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।

ছবি: বাব্লিউপি
অন্যান্য দেশের ভূমিকা
- চীন: রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে চীন শান্তি আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে না।
- সৌদি আরব: সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেছেন, “যেকোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রক্রিয়ায় রাশিয়ার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।”
- ভারত: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে বিভিন্ন দেশের প্রস্তাবনা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। তবে, মিত্র ও প্রতিপক্ষদের মধ্যে মতপার্থক্য এবং শর্তাবলির কারণে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তি এখনো অধরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও সমঝোতার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান সম্ভব।