ইউনুস: শান্তি প্রতিষ্ঠায় মোদি ও শেহবাজের ভূমিকায় প্রশংসা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. ইউনুস ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে শান্তির পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নেন। তিনি এই প্রচেষ্টাকে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন। ছবিঃ নিউ এইজ
আঞ্চলিক শান্তির পক্ষে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনুস এক গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতিতে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখতে ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃত্ব একটি সাহসিকতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নরেন্দ্র মোদি ও শেহবাজ শরীফের মধ্যে সাম্প্রতিক শান্তি আলোচনার ফলস্বরূপ যে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত এসেছে, সেটিকে ‘ইতিহাসগঠিত উদ্যোগ’ বলে অভিহিত করেন তিনি। ড. ইউনুস আরও বলেন, এ ধরনের রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা ও উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে।
মোদি ও শেহবাজের শান্তি প্রচেষ্টার প্রশংসা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী উত্তেজনা প্রশমনে যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন ড. ইউনুস। তিনি বলেন, “এই দুই নেতা প্রমাণ করেছেন যে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে বহু বছরের পুরোনো দ্বন্দ্বও সমাধান করা সম্ভব।” এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে একটি নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে, যেখানে সামরিক শক্তির পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।
সীমান্ত উত্তেজনার প্রভাব ও তার পরিণতি
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংঘর্ষ এবং সামরিক উত্তেজনা শুধু দুই দেশেরই নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। সামরিক খরচ বেড়েছে, সাধারণ মানুষের জীবনহানি হয়েছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন থমকে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবিরতি শুধু কূটনৈতিক সাফল্য নয়, বরং মানবিক সঙ্কট নিরসনের একটি বড় পদক্ষেপ। ড. ইউনুস বলেন, “মানবজীবন রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য কূটনীতি ব্যবহারই হচ্ছে বুদ্ধিদীপ্ত ও সভ্য রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য।”
বাংলাদেশের শান্তিনীতির ধারাবাহিকতা
বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার পর থেকেই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই নীতিমালার ভিত্তিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি গড়ে উঠেছে। ইউনুস বলেন, এই নীতিরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সবসময় শান্তিপূর্ণ সমাধানকেই গুরুত্ব দেয়। তাই ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ বাংলাদেশের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ইতিবাচক।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার আহ্বান
ড. ইউনুস বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান যেন তারা এই শান্তি চুক্তিকে স্থায়ী রূপ দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তিনি উল্লেখ করেন, শুধুমাত্র দুই দেশের সদিচ্ছা যথেষ্ট নয়, বরং আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা এবং কূটনৈতিক চাপও এই প্রক্রিয়াকে টেকসই করে তুলতে পারে। তিনি জাতিসংঘ ও সার্কসহ আঞ্চলিক জোটগুলোর সক্রিয়তাও প্রত্যাশা করেন।

ছবিঃ খবরের কাগজ
আঞ্চলিক বাণিজ্যের সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
দুই বৃহৎ প্রতিবেশীর মধ্যে শান্তি স্থাপিত হলে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমন্বয়ের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য, সহজ ভিসা নীতি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন তখনই বাস্তবায়নযোগ্য হবে, যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা কমবে। ড. ইউনুস বলেন, “এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কূটনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। শান্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শান্তির গুরুত্ব
ড. ইউনুস তাঁর বক্তব্যে বিশেষভাবে শিশু, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দুর্দশার কথা উল্লেখ করেন। সীমান্তে সংঘর্ষ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই শ্রেণির মানুষ। তিনি বলেন, “শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক মানে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বস্তি নয়, এটি একটি মানবিক দায়িত্ব।” যুদ্ধ না হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরাপদে বাঁচতে পারে, শিশুরা স্কুলে যেতে পারে এবং পরিবারগুলো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
গণমাধ্যম ও সামাজিক সচেতনতায় শান্তি বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন
ড. ইউনুস মনে করেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা নয়, বরং গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকেও এই শান্তি বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। ভ্রান্ত তথ্য ও ঘৃণার রাজনীতি বন্ধ করে সত্য, বিশ্বাস এবং সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শান্তি শুধুমাত্র রাজনৈতিক চুক্তি নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলনও।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অবস্থান ও সক্রিয় অংশগ্রহণ
ড. ইউনুস এও ইঙ্গিত দেন যে, ভবিষ্যতে যদি প্রয়োজন হয়, বাংলাদেশ আঞ্চলিক শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাও পালন করতে প্রস্তুত থাকবে। বাংলাদেশের ইতিহাস, সাংস্কৃতিক মৈত্রী ও ভূরাজনৈতিক অবস্থান এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যেখান থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বাস্তব ভিত্তিতে শান্তির পথে এগিয়ে যেতে পারে।