ইরান-যুক্তরাষ্ট্র রোমে পারমাণবিক আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক ইস্যুতে রোমে নতুন আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য স্থিতিশীলতা এবং পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এই বৈঠক কতটা গুরুত্বপূর্ণ, জেনে নিন বিস্তারিত। ছবিঃ এএফপি
বৈশ্বিক দৃষ্টি রোমের দিকে
বিশ্ব রাজনীতির উত্তপ্ত মঞ্চে আবারও আলোচনায় এসেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পারমাণবিক চুক্তি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা আলোচনা ফের শুরু হচ্ছে রোমে, যা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। মার্কিন ও ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বৈঠকে ২০১৫ সালের জেসিপিওএ (JCPOA) চুক্তি পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে নতুন রূপরেখা তৈরির ওপর জোর দেওয়া হবে।
আলোচনার পটভূমি ও জেসিপিওএ চুক্তির ইতিহাস
২০১৫ সালে ছয় জাতিগোষ্ঠীর (P5+1) সঙ্গে ইরান একটি পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যাকে বলা হয় জেসিপিওএ। এই চুক্তির আওতায় ইরান তার পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় এবং ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হতে থাকে এবং আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আলোচনা শুরুর কারণ
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, চীনের প্রভাব বিস্তার, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা এবং তেল রপ্তানি বাজারে অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ইরান পারমাণবিক আলোচনা এখন একটি কৌশলগত অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ইরান যেন পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করে এবং অঞ্চলটি স্থিতিশীল থাকে। অন্যদিকে, ইরান চাইছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও তাদের অর্থনৈতিক স্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। এই কারণেই রোমে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।
আলোচনার সম্ভাব্য এজেন্ডা ও লক্ষ্য
রোমে অনুষ্ঠিতব্য এই আলোচনায় কয়েকটি মূল বিষয় এজেন্ডায় রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিতকরণ, আন্তর্জাতিক পরিদর্শন ব্যবস্থা পুনরায় সক্রিয় করা, নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষায় দিকনির্দেশনা নির্ধারণ। মার্কিন পক্ষ জোর দিচ্ছে কার্যকর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উপর, যাতে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বন্ধ রাখা যায়। ইরান পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে—তাদের বৈধ অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের ভূমিকা
এই আলোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিরাও পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করবেন। ইউরোপের দেশগুলো বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন, কারণ একটি ব্যর্থ আলোচনা ইরানের পরমাণু কার্যক্রম আরও উগ্র করে তুলতে পারে, যার প্রভাব সরাসরি ইউরোপেও পড়তে পারে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে এই আলোচনাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি চায় যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।