ইশরাক হোসেনের জোরালো পদত্যাগ দাবি আসিফ ও মাহফুজ বিরুদ্ধে

রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে তাদের তাৎক্ষণিক পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। বিস্তারিত পড়ুন এই প্রতিবেদনে। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার
রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্কের ঝড়: ইশরাকের কড়া ভাষায় পদত্যাগ দাবি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিএনপির তরুণ নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের সাম্প্রতিক মন্তব্যে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দলীয় কিছু সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাদের তাৎক্ষণিক পদত্যাগ দাবি করেন। এই দুই নেতা হলেন—আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলম। ইশরাক বলেন, দলকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হলে অনৈতিক ও সুবিধাবাদী নেতৃত্বকে প্রতিহত করা এখন সময়ের দাবি।ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেন, আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের কর্মকাণ্ডে দল শুধু বিভক্ত হচ্ছে না, বরং জনগণের কাছে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দলে থেকে যারা গোপনে শাসক দলের সঙ্গে সমঝোতা করে নিজেদের পকেট ভরছেন, তাদের রুখতে না পারলে বিএনপির ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে।
বক্তব্যে ইশরাক স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা যদি এখনই এসব অনৈতিক নেতৃত্বকে বাদ দিতে না পারি, তাহলে দলের পতন ঠেকানো যাবে না।” তিনি দাবি করেন, দলের তৃণমূল পর্যায়েও এই দুই নেতার বিরুদ্ধে অসন্তোষ রয়েছে এবং অনেকে তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ। তিনি দলের শীর্ষ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি জানান এবং বলেন, দলীয় শুদ্ধি অভিযান শুরু করা এখন সময়ের ব্যাপার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়
ইশরাক হোসেনের এই পদত্যাগ দাবির বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই তাঁকে সাহসী নেতা হিসেবে আখ্যা দেন, আবার অনেকে বলেন এটি দলীয় ঐক্য নষ্ট করতে পারে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে এই বক্তব্য ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, “দলীয় সংস্কার ছাড়া বিএনপির পুনর্জাগরণ সম্ভব নয়।”
দলের একাংশ ইশরাকের বক্তব্যকে সমর্থন জানালেও, অন্য অংশ এটিকে ‘অপরিণত রাজনৈতিক কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, দলের কিছু সিনিয়র নেতা মনে করছেন, দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এভাবে প্রকাশ্যে কথা বলা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল। তবে ইশরাক স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁর বক্তব্য দলের ভেতরকার অসঙ্গতিকে সামনে এনে শুদ্ধি অভিযান শুরুর একটি আহ্বান মাত্র।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এখন নীরব
এই গুরুতর অভিযোগের পরও বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ মনে করছেন, দলীয় নেতৃত্ব ইশরাকের এই বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে পেতে চায়। আবার কেউ বলছেন, এটি দলের জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা, যা দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভের প্রকাশ মাত্র।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ইশরাকের বক্তব্য
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইশরাক হোসেনের বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দলীয় নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবি এখন কেবল কর্মীদের মধ্যেই নয়, তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশের চাওয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যদি তরুণ নেতৃত্বের এই বার্তা বুঝে পদক্ষেপ না নেয়, তবে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি করতে পারে।
ইশরাকের প্রকাশ্য এই পদত্যাগ দাবি নিয়ে আগামী দিনে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। দলের ভেতরে নতুন মেরুকরণ এবং সংস্কারের দাবি এখন সময়ের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়—দলীয় হাইকমান্ড এই দাবির মুখে কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং কীভাবে দলে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।