ইসরায়েল নতুন গাজা অভিযান শুরু করলো, মৃতের সংখ্যা ছাড়ালো ৫৩,০০০

ইসরায়েলি সেনারা গাজার বিরুদ্ধে নতুন সামরিক অভিযান চালু করেছে, যেখানে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৩,০০০। চলমান সংঘর্ষ ও মানবিক সংকটের বিস্তারিত সংবাদ পড়ুন। ছবিঃ এএফপি
ইসরায়েল নতুন গাজা অভিযান শুরু করলো, সংঘর্ষ তীব্রতর
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সম্প্রতি গাজার ওপর একটি নতুন সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যা পূর্বের সংঘর্ষের তুলনায় অনেক বেশি তীব্র ও ব্যাপক। এই নতুন অভিযানে লক্ষ্যবস্তু ছিল গাজার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর ঘাঁটি ও অস্ত্রাগার ধ্বংস করা, তবে বাস্তবে বেসামরিক নাগরিকরাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চলমান সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৫৩,০০০ জনের, যা একটি বিরাট মানবিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে। গাজা উপত্যকা এখন এক ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবন হারাচ্ছেন এবং অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে কড়া সমালোচনা করেছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
হামলার লক্ষ্যবস্তু ও প্রভাব: বেসামরিক লোকজনের ওপর ভয়াবহ প্রভাব
নতুন এই অভিযানের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু ছিল গাজার সশস্ত্র সংগঠনগুলোর ঘাঁটি ও অস্ত্রাগার ধ্বংস করা। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা গেছে যে, এই সামরিক হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গাজার ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, স্কুল, হাসপাতাল ও বাজার লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ চালানো হয়েছে, যার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। অসহায় মানুষজন গৃহহীন হয়ে পড়েছে, তাদের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে আহতদের সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে, কারণ অবরোধ ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা সীমিত। এমনকি হাসপাতালকেও লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও মানবিক সংকট চরমে
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন এমন এক সংকটময় অবস্থায় পৌঁছেছে, যা বর্ণনা করার ভাষা কঠিন। হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে, ওষুধের অভাব দেখা দিয়েছে, এবং চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা সীমিত উপকরণ নিয়ে কাজ করছেন। এই অবস্থায় হাজার হাজার আহত মানুষ যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে জীবন সংকটে পড়েছেন। বিদ্যমান অবরোধের কারণে আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য গাজায় পৌঁছাতে পারছে না, যা সংকটকে আরও গভীর করছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে খাদ্য ও পানির অভাব মারাত্মক মাত্রায় পৌঁছেছে, ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এই সংকটকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং অবিলম্বে সাহায্য পৌঁছানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলের দাবি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি ও অস্ত্রাগারকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে এই অভিযান পরিচালনা করছে। তারা বলেছে, এই অভিযান গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী হামলা রোধ করবে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশ এই দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। জাতিসংঘ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং বিশ্ব নেতারা এই সামরিক অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা দ্রুত যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগের আহ্বান জানাচ্ছেন। অনেক দেশই গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে।

ছবিঃ আল জাজীর
নিহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন স্বাধীন সংস্থার মতে, গাজায় মৃতের সংখ্যা ৫৩,০০০ ছাড়িয়েছে। এই মৃত্যুর অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ, যার মধ্যে অনেকেই শিশু ও নারী। আহতের সংখ্যা লক্ষাধিক ছাড়িয়েছে। ধ্বংসযজ্ঞের কারণে গাজার হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং তাদের বেঁচে থাকার অবস্থা চরম ঝুঁকিতে। স্কুল, হাসপাতাল ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসপ্রাপ্ত, অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থবির। এই পরিসংখ্যান গাজার মানুষের জন্য এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের পরিচায়ক, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
মানবিক সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি
আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো অবিলম্বে গাজার অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে, যাতে প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম গাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। অবরোধের ফলে গাজার নাগরিকরা খাদ্য, পানি ও ওষুধের জন্য এক ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এই অবরোধ মানবিক আইনের পরিপন্থী এবং এতে গাজার সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই তারা দ্রুত অবরোধ উঠিয়ে সাহায্য কার্যক্রম শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। শুধুমাত্র যুদ্ধ নয়, মানবিক দিক থেকেও পরিস্থিতি মারাত্মক, যা অবিলম্বে সমাধানের দাবি রাখে।