রায়েল-সিরিয়া সংঘর্ষ: সিরিয়ার গোলাবর্ষণের জবাবে পাল্টা হামলা

সিরিয়া থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া প্রজেক্টাইলের জবাবে ইসরায়েল সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালায়। জানুন সংঘর্ষের পটভূমি, প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক প্রতিফলন। ছবিঃ এএফপি
সিরিয়া থেকে গোলা ছোড়ার অভিযোগে উত্তপ্ত হলো ইসরায়েল সীমান্ত
ইসরায়েল সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, সিরিয়া থেকে একাধিক প্রজেক্টাইল বা গোলা তাদের ভূখণ্ডে এসে পড়ার পর তারা পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে সিরিয়ার অভ্যন্তরে গোলাবর্ষণ শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে চলমান উত্তেজনার পটভূমিতে এই ঘটনা নতুন করে নিরাপত্তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, সিরিয়া থেকে ছোড়া গোলাগুলি তাদের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় আঘাত হানে, যদিও এতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (IDF) এক বিবৃতিতে জানায়, সিরিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলোর উপর পাল্টা গোলাবর্ষণ চালানো হয়েছে, যেগুলো থেকে ইসরায়েলের দিকে হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফ-এর মুখপাত্র বলেন, “ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বে আঘাত হানলে আমরা কোনোভাবেই তা মেনে নেব না।” এই প্রতিক্রিয়া ছিল “নির্ভুল ও লক্ষ্যভেদী”, যা মূলত সীমান্ত এলাকায় সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছে।
সিরিয়ার প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
সিরিয়ান সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনার বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে স্থানীয় সূত্র এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, সিরিয়ার বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং কিছু স্থানে অগ্নিকাণ্ডও দেখা গেছে। এদিকে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইসরায়েল-সিরিয়া সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা উভয় পক্ষকে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী গোলান মালভূমি বহু বছর ধরে বিতর্কিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল এই অঞ্চল দখল করে নেয় এবং ১৯৮১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি তাদের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো এই দাবি স্বীকৃতি দেয়নি। সম্প্রতি ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর সিরিয়ায় সক্রিয়তা এবং সেখান থেকে ইসরায়েলের দিকে গোলাবর্ষণের ঘটনা নতুন করে অঞ্চলটিকে অস্থির করে তুলছে।
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ার জবাব?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ার এই গোলাবর্ষণ হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ও গোষ্ঠী গাজায় ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে, এবং তা সামরিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সিরিয়া হতে ইসরায়েলের দিকে প্রজেক্টাইল ছোড়া হয়তো সেই প্রতিবাদেরই সামরিক রূপ, যার জবাবে ইসরায়েল সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
উত্তর ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ এই হামলার পর ব্যাপক আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং সরকারিভাবে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে, এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও সক্রিয় করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও শান্তি প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা
এই সংঘাতের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছে, মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই জটিল, এবং এই ধরনের আঞ্চলিক সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দুই দেশকে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি আবারও জোরালোভাবে উঠে এসেছে।