একটি সোনালী প্রজন্ম কি অপচয় হচ্ছে? – প্রতিভা, পরিকল্পনা ও বাস্তবতার বিশ্লেষণ

সোনালী প্রজন্ম কি শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ? বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে প্রতিভা, দুর্বল পরিকল্পনা ও কাঠামোগত সংকট একদল প্রতিশ্রুতিশীল তরুণকে পিছিয়ে দিচ্ছে। ছবিঃ পারো ফাসি ওমানে
প্রতিভার উত্থান: একটি নতুন ভোরের প্রতিশ্রুতি
গত দশকে বাংলাদেশের খেলাধুলা, বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেটে একঝাঁক তরুণ প্রতিভার আগমন দেশবাসীর মনে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছিল। সাদামাটা পরিকাঠামোর মাঝেও তারা নিজেদের প্রতিভা, নিষ্ঠা এবং অদম্য সাহসিকতা দিয়ে নজর কেড়েছিল দেশ-বিদেশের স্কাউট ও বিশ্লেষকদের। এদের মধ্যে কেউ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্রুত পরিচিতি পেয়েছেন, কেউবা ঘরোয়া লিগেই চমক দেখিয়েছেন। মিডিয়া, সমর্থক ও ক্রীড়া বোদ্ধারা বলেছিলেন—এরা একটি ‘সোনালী প্রজন্ম’। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছে কি?
কাঠামোগত দুর্বলতা: প্রতিভার শ্বাসরোধ
যে কোনো প্রতিভার সঠিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি এবং পেশাদার ব্যবস্থাপনা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানগুলো এই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। কোচিং স্টাফের বারবার পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক এক্সপোজার-এর অভাব এবং পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা তরুণদের বিকাশে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন ফুটবলারের ক্যারিয়ার যখন গড়ে ওঠার কথা, তখনই তাকে নিতে হচ্ছে ব্যাকফুটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত—এটা কি সত্যিই মেধার অপচয় নয়?
সুযোগ না পাওয়ার বেদনা: ভেতরে ভেতরে পুড়ে যাওয়া
অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে সুযোগ না পেয়ে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। দল নির্বাচনে প্রভাব, আঞ্চলিক রাজনীতি এবং যোগ্যতা নয়, পরিচিতির ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ বহুবার উঠেছে। এর ফলে সত্যিকারের মেধাবী তরুণরা একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে যারা সুযোগ পেয়েও নিজের সেরাটা দিতে পারছে না, তারা পুরো প্রজন্মের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। এই অব্যবস্থা চলতে থাকলে আমরা শুধুই হারানো প্রতিভার গল্প লিখে যাবো।
পরিকল্পনার অভাব: সাময়িক সাফল্যে আত্মতুষ্টি
বাংলাদেশে ক্রীড়া প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে তাৎক্ষণিক সাফল্যেই খুশি থাকে, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও পরিকল্পনার চর্চা খুবই সীমিত। তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য নেই যথাযথ ‘গ্রুমিং’ সিস্টেম বা স্থায়ী প্রশিক্ষণ ক্যাম্প। কেউ ভালো খেললে তাকে নিয়ে প্রচার চলে, কিন্তু পরে সে কোথায় হারিয়ে যায়, তার আর কোনো খোঁজ রাখা হয় না। ক্লাব পর্যায়েও খেলোয়াড়দের মানোন্নয়নের বদলে ফলাফলের পেছনে ছোটা যেন প্রধান লক্ষ্য। এই প্রবণতা পুরো প্রজন্মকেই খাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
যদিও এই পরিস্থিতি হতাশাজনক, কিন্তু এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ফেডারেশন এবং ক্লাবগুলো যদি একত্রিত হয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং তরুণদের উপর বিশ্বাস রেখে বিনিয়োগ করে, তবে এই প্রজন্মের সম্ভাবনা আবারও জ্বলে উঠতে পারে। দরকার, স্বচ্ছ দল নির্বাচন, আধুনিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, এবং আন্তর্জাতিক মানের টেকনিক্যাল সাপোর্ট।