কারনির বিজয়ের পর বিশ্ব বাণিজ্য যুদ্ধ কোন পথে যাচ্ছে?

মার্ক কারনির নির্বাচনী জয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্ক এবং বাণিজ্য যুদ্ধের গতিপথে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে এই পরিবর্তন বৈশ্বিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে। ছবি: বিবিসি
কারনির বিজয়: একটি নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
মার্ক কারনি, একজন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ব্যাংকার এবং অর্থনৈতিক কৌশলবিদ, সাম্প্রতিক নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন এবং এখন বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতায় পরিণত হয়েছেন। তার অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্ব অর্থনীতির উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, তিনি পূর্বের আগ্রাসী বাণিজ্যনীতির বিপরীতে একটি আরো সংলাপভিত্তিক ও সহনশীল কৌশলের পক্ষে।
বাণিজ্য যুদ্ধে পরিবর্তনের সম্ভাবনা
পূর্ববর্তী সরকারগুলো যেভাবে শুল্ক আরোপ, আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বাণিজ্য প্রতিযোগিতা চালিয়েছিল, কারনি সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে আরও সমঝোতামূলক একটি পথ অনুসরণ করতে পারেন। তার নির্বাচনী প্রচারে বারবার উঠে এসেছে “বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা”র কথা।
তিনি WTO-র নিয়মের প্রতি সম্মান দেখানোর পক্ষে এবং অপ্রয়োজনীয় শুল্ক ও প্রতিবন্ধকতা হ্রাসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের ওপর প্রভাব
বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য দ্বন্দ্বগুলোর একটি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব। কারনি এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন কৌশল গ্রহণের পক্ষপাতী বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি কৌশলগত প্রতিযোগিতাকে একান্তভাবে সামরিক বা অর্থনৈতিক নয়, বরং কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে। যদি তার প্রশাসন চীনের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপ শুরু করে, তাহলে বৈশ্বিক বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসতে পারে।

ছবি: করুন ৪
ইউরোপ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বার্তা
কারনির নেতৃত্ব শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা চীন নয়, ইউরোপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাণিজ্যনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো কারনির উদার বাণিজ্যনীতির কারণে সুবিধাভোগী হতে পারে। তিনি আগেও জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নয়ন, শ্রম অধিকার ও ইক্যুইটিবিষয়ক বাণিজ্যিক নীতির কথা বলেছেন—যা এলডিসি দেশগুলোর জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে।
বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিক্রিয়া
কারনির নির্বাচনের পরপরই আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে ইতিবাচক সাড়া লক্ষ্য করা গেছে। বিনিয়োগকারীরা এই নতুন প্রশাসনের নীতির প্রতি আস্থা দেখাচ্ছে, বিশেষ করে প্রযুক্তি, সবুজ জ্বালানি এবং অবকাঠামো খাতের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। অনেকেই আশা করছেন যে, বাণিজ্য যুদ্ধের চাপে থাকা শিল্প খাতগুলো আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে।
মার্ক কারনির বিজয় শুধুই রাজনৈতিক সাফল্য নয়, বরং এটি একটি অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে। যদি তিনি তাঁর প্রতিশ্রুত সমন্বিত, দায়িত্বশীল ও কূটনৈতিক বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়ন করেন, তাহলে বিশ্বের দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এক শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক পরিণতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।