খাগড়াছড়িতে ভাসানির আশঙ্কায় ১২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা

খাগড়াছড়িতে ভাসানির ঝুঁকির কারণে ১২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। ছবিঃ বিসনেস স্টান্ডের
১২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খাগড়াছড়িতে ভূমিধস ঝুঁকিতে খোলা
খাগড়াছড়ি জেলার পাহাড়ি এলাকাগুলো বর্ষাকালে ভূমিধসের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। চলতি বছরও অবিরাম বৃষ্টি ও ভারী বর্ষণের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কা বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ১২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়েছে, যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয় নিতে পারছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্র স্থানীয় স্কুল, সরকারি ভবন ও কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জরুরি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রশাসন মানুষের জীবন রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকার সংকল্প ব্যক্ত করেছে।
ভূমিধসের ঝুঁকি ও স্থানীয় পরিস্থিতি
খাগড়াছড়ি জেলা, বিশেষ করে পাহাড়ি ঢালবিশিষ্ট এলাকাগুলো ভূমিকম্প ও ভূমিধসের প্রবণতাসম্পন্ন। এবারের বর্ষায় পাহাড়ের ঢালগুলো বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টির পানির চাপ ভূমি ঝরনার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। স্থানীয় নদী ও খালগুলোও অতিরিক্ত পানি ধারণ করতে না পারায় সেগুলোও বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঝর্ণা ও খাসা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে ভাসানি ও ভূমিধসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন পূর্বাভাস ও জরুরি সতর্কতা বার্তা প্রচার করে এলাকাবাসীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে, যাতে প্রাণহানির ঘটনা এড়ানো যায়।
আশ্রয়কেন্দ্রের ভূমিকা ও কার্যক্রম
এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো শুধুমাত্র নিরাপদ আশ্রয় নয়, বরং মানুষের জন্য জরুরি সেবাও নিশ্চিত করছে। কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য সরবরাহ, পরিচ্ছন্ন পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মনোবৈজ্ঞানিক সহায়তাও প্রদান করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবক ও এনজিও কর্মীরা নিয়মিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে থেকে মানুষের সেবা নিশ্চিত করছেন। শিশুদের জন্য অস্থায়ী শিক্ষা ও বিনোদন ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে তারা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারে এবং স্বাভাবিক পরিবেশে থাকতে পারে। এছাড়া বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে সবাই সুরক্ষিত ও সন্মানজনক পরিবেশে থাকতে পারে।
স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া
আশ্রয়কেন্দ্র খোলার খবর পাওয়ার পর স্থানীয় মানুষের মধ্যে ভিন্নমত লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র খোলাকে স্বাগত জানিয়েছেন, কারণ এটি তাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং বিপদ মুহূর্তে নিরাপত্তার আশ্বাস দেয়। তবে কিছু মানুষ এখনও নিজের বাড়ি ও সম্পত্তি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেছেন, যাদের মানসিক শান্তি ফিরিয়ে আনা এখন প্রশাসনের মূল চ্যালেঞ্জ। প্রশাসন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও ধর্মীয় গুরুর মাধ্যমে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করছে এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে নিশ্চিত করছে। এতে অনেকেই নিজেদের জীবন ও পরিবারকে রক্ষা করার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হচ্ছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি
জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিতে জরুরি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাহাড়ি ঢাল ও নদীর পানি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, যা দ্রুত সংকেত প্রদান করে প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে সহায়তা করছে। তাছাড়া, উদ্ধারকারী দল ও প্রাথমিক চিকিৎসকরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্য ও ওষুধ মজুদ রাখা হয়েছে, যা প্রয়োজনে দ্রুত বিতরণ করা হবে। এই প্রস্তুতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষের জীবন রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।