খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে যুক্ত হচ্ছে আরও ৫ লাখ পরিবার

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি

বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে নতুন করে আরও ৫ লাখ পরিবার যুক্ত হচ্ছে। জেনে নিন এই কর্মসূচির বিস্তারিত সুবিধা, সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ও এর প্রভাব। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আরও ৫ লাখ পরিবার পাচ্ছে উপকার

বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প হলো খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। বহু বছর ধরে এ কর্মসূচি দরিদ্র ও নিম্ন-আয়ের মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে চাল সরবরাহ করে চলেছে, যা তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। বর্তমানে সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, নতুন করে আরও ৫ লাখ পরিবারকে এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। এর ফলে দেশের বহু হতদরিদ্র মানুষ নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্যভাবে খাদ্য সহায়তা পাবে, যা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

কর্মসূচির সম্প্রসারণ ও লক্ষ্য

এই সম্প্রসারণের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারকে সহায়তা প্রদান। বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ পরিবার এই সুবিধা পাচ্ছে। নতুন ৫ লাখ পরিবার যুক্ত হলে সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৫ লাখে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত পরিবারগুলোকে বাছাই করা হবে, যাতে প্রকৃত দরিদ্র পরিবারই সহায়তা পায়। বিশেষত বন্যা, খরা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে এই সম্প্রসারণ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় প্রতি পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয় মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে। এই সহায়তা তাদের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা পূরণে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। বিতরণ পদ্ধতিতে প্রতিটি ইউনিয়নে নির্ধারিত ডিলারের মাধ্যমে চাল সরবরাহ করা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসরণ করে চাল বিতরণ করা হয় যাতে উপকারভোগীরা সুশৃঙ্খলভাবে তা গ্রহণ করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

নারী-প্রধান পরিবার ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার

এই কর্মসূচির সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সমাজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোর প্রতি। বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত নারী, নারী-প্রধান পরিবার, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে তালিকা প্রণয়নের সময়। এতে করে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যাদের, তারা সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে উপেক্ষিত না হয়। এই শ্রেণির মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে সঠিক উপকারভোগীদের নির্ধারণ করছে।

খাদ্য সহায়তা বাংলাদেশ

ছবিঃ বিসনেস স্টান্ডের

ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যমে সহজতর সেবা

সরকার খাদ্য বিতরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল রেশন কার্ড’ চালু করছে। এই কার্ডের মাধ্যমে উপকারভোগীরা নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট পরিমাণ চাল সংগ্রহ করতে পারবেন, যা একদিকে যেমন অনিয়ম রোধ করবে, তেমনি প্রশাসনিক জটিলতা কমাবে। বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি উপজেলায় এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে এই ডিজিটাল ব্যবস্থা সারা দেশে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।এই খাদ্য সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন একযোগে কাজ করছে। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সমন্বয়ে প্রতিটি এলাকাতে তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য পৃথক সেল গঠন করা হয়েছে, যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন এবং কোন ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি না ঘটে।

দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। যেসব পরিবার দৈনিক খাবার নিশ্চিত করতে হিমশিম খায়, তাদের জন্য এই প্রকল্প আশীর্বাদস্বরূপ। বিশেষ করে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে এই ধরণের সহায়তা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। পরিবারগুলো মাসিক খাদ্য ব্যয়ের একটি বড় অংশ এই সহায়তা থেকে মেটাতে পারায় তারা অন্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করতে পারছে, ফলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।

সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিকে আরও বিস্তৃত করার চিন্তা করছে। ভবিষ্যতে চালের পাশাপাশি ডাল, তেল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে কর্মসূচির আওতায় টেকসই সহায়তা নিশ্চিত করতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করা হচ্ছে। এই সব পদক্ষেপের ফলে খাদ্য নিরাপত্তা শুধু তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানেই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী দারিদ্র্য হ্রাসেও বড় ভূমিকা রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *