খালেদা জিয়া ৫ মে দেশে ফিরছেন:

খালেদা জিয়া

দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ৫ মে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরছেন। এ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে বাড়ছে কৌতূহল ও আলোচনা। ছবি: ডেইলি ষ্টার

চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার ঘোষণা: ৫ মে লন্ডন থেকে ঢাকায়

দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে আবারও আলোচনায় এসেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ২০২৫ সালের জানুয়ারির শুরুতে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাড়ি জমান তিনি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৫ মে (সোমবার) তিনি বাংলাদেশ বিমানের একটি নির্দিষ্ট ফ্লাইটে করে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। তার প্রত্যাবর্তনের খবরে বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেকটাই উন্নত এবং চিকিৎসকদের পরামর্শেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রবাসে ঈদ উদযাপন ও পারিবারিক সময়

চিকিৎসার সময় খালেদা জিয়া ছিলেন তার বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায়। এই সফরেই তিনি ঈদ উদযাপন করেন তার পরিবারের সঙ্গে, যেটি গত কয়েক বছর তার জন্য ছিল অত্যন্ত বিরল অভিজ্ঞতা। এর আগের চারটি ঈদ তিনি কাটিয়েছেন কখনো কারাগারে, আবার কখনো হাসপাতালে। লন্ডনে তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের সঙ্গে সময় কাটানো খালেদা জিয়ার মানসিক ও শারীরিক উভয় দিকেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে জানা যায়। ঈদের ছুটিতে তার সঙ্গে ছিলেন আরেক পুত্রবধূ সৈয়দা শামিলা রহমান সিনথিও।

জটিল শারীরিক অবস্থার মধ্যেও দৃঢ় মনোবল

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ছিল একাধিক জটিল রোগ কেন্দ্রিক। তিনি লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনির জটিলতা ও আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। এসব কারণে তাকে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে এবং চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে কঠোর নিয়মে চলতে হয়েছে। লন্ডনে অবস্থানকালে তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়, এবং চিকিৎসকরা তার স্থিতিশীলতা নিয়ে সন্তুষ্ট হন। চিকিৎসা শেষে পুনরায় সক্রিয় জীবনে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি—এটি তার মানসিক দৃঢ়তারই প্রমাণ।

আইনি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক

২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হয়। তবে ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় তাকে ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয় সরকার। ২০২৪ সালের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় তার দণ্ড সম্পূর্ণভাবে মাফ হয়ে যায়। ফলে আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি প্রথমবারের মতো বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান এবং এখন দেশে ফিরছেন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে। এই পরিস্থিতি আগামী দিনে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা কেবল একটি চিকিৎসা-ফেরত নয়, বরং অনেকের মতে এটি তার রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে ফিরে আসার প্রস্তুতি। যদিও এখনো তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নেবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আশাবাদ দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, তার উপস্থিতি বিএনপির মধ্যে নেতৃত্বের স্থায়িত্ব ও অভ্যন্তরীণ সংহতি আনতে পারে, যা আগামী জাতীয় রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দলের নেতারা বলছেন, তার পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা ছাড়া বিএনপির ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করা কঠিন।

জনসমর্থন ও গণমাধ্যমে আলোড়ন

খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন নিয়ে শুধু রাজনৈতিক মহলেই নয়, সাধারণ জনগণের মাঝেও আগ্রহ দেখা দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন নিউজপোর্টাল এবং টেলিভিশনে তার ফেরাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি সমর্থকরা ঢাকায় তার স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত একটি শান্তিপূর্ণ র‍্যালির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার এই প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতিতে নতুন করে ভারসাম্য তৈরির সম্ভাবনা রাখে।

সূত্র: The Daily Star – ২ মে, ২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *