গভীর নিম্নচাপ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানলো, পাঁচ বিভাগে টানা ভারী বৃষ্টির শঙ্কা

আবহাওয়ার খবর

বাংলাদেশে গভীর নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম, বরিশালসহ পাঁচটি বিভাগে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ছবিঃ সাদ্দাম হোসাইন /প্রথম আলো

গভীর নিম্নচাপ উপকূলে আঘাত হানলো, বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি শুক্রবার গভীর রাতে উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি মূলত বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে সৃষ্টি হয়ে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে উপকূলের দিকে অগ্রসর হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এই নিম্নচাপের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বায়ুর চাপ কমে যাওয়ায় বৃষ্টির প্রবণতা বেড়ে গেছে। গভীর নিম্নচাপটি বর্তমানে স্থলভাগে প্রবেশ করায় তা ধীরে ধীরে দুর্বল হলেও এর প্রভাব এখনো প্রবল রয়েছে, বিশেষ করে বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার ক্ষেত্রে।

চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ঢাকা ও সিলেটে বৃষ্টির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, ঢাকা এবং সিলেট বিভাগে প্রবল বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। এই বিভাগগুলোতে বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব অঞ্চলের কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে এবং নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। নিচু অঞ্চলসমূহে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং স্থানীয় স্কুল-কলেজগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সমুদ্র ও নদীবন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত, নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে উঠেছে, ফলে সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার ও নৌযানসমূহকে তীরে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নদীবন্দরগুলোতেও সতর্কতা জারি করে বলা হয়েছে, ছোট ও মাঝারি নৌযান চলাচল করা থেকে বিরত থাকতে। অভ্যন্তরীণ নৌপথেও সাময়িকভাবে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল সীমিত করা হয়েছে। নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, ফলে নৌদুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রবল।

গভীর নিম্নচাপের ফলে বড় ধরনের বন্যা বা ভূমিধসের আশঙ্কা না থাকলেও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক এলাকায় কৃষিক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে চরাঞ্চল ও নিচু এলাকার মানুষজন চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জরুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োজিত করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগও সম্ভাব্য বিপর্যয়ের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখছে।

ঘূর্ণিঝড়

ছবিঃ ডেইলি সুন্

জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার, ঘরে থাকার নির্দেশ

গভীর নিম্নচাপের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনসচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারিভাবে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে এবং জনগণকে ঘরে থাকার জন্য বলা হয়েছে। টিভি, রেডিও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে যাতে মানুষ পূর্বাভাস সম্পর্কে সজাগ থাকতে পারে। বয়স্ক ও শিশুদের বিশেষভাবে নিরাপদ স্থানে রাখতে বলা হয়েছে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও জনগণকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

কৃষিখাতে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা, প্রয়োজন সচেতনতার

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পাকা ধান কাটা শুরু হলেও অনেক জায়গায় এখনো ফসল মাঠেই রয়েছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে টানা বৃষ্টিপাতে এসব ফসল পানিতে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলস্বরূপ কৃষকদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে যাতে তারা দ্রুত ফসল ঘরে তোলে এবং ক্ষেতের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পাশাপাশি কৃষিজমিতে প্রয়োজনীয় ছাউনির ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগাম প্রস্তুতির প্রশংসা

বাংলাদেশ অতীতে অনেক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপের সম্মুখীন হয়েছে। তবে এবারের পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও আবহাওয়া অফিস সময়মতো পূর্বাভাস প্রদান করেছে এবং প্রস্তুতির দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষজন এখন তুলনামূলক বেশি সচেতন। স্কুল, কলেজ ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবনগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করে জরুরি খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *