গাজায় ইসরায়েলি হামলায় চিকিৎসক দম্পতির ৯ সন্তান নিহত

ফিলিস্তিন শিশুহত্যা

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে এক চিকিৎসক দম্পতির ৯ সন্তান। উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, এ ঘটনা মানবিক সংকট আরও গভীর করেছে। জানুন বিস্তারিত হৃদয়বিদারক প্রতিবেদন। ছবিঃ প্রথম আলো

এক রাতেই নিঃশেষ পরিবার

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক রাতের বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছে এক চিকিৎসক দম্পতির নয় সন্তান। স্থানীয় উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, এই হামলা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খানে ইউনিস শহরের একটি আবাসিক ভবনকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। যেখানে চিকিৎসক দম্পতি তাদের সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছিলেন। এ ঘটনার পর সারা অঞ্চলজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একটি পরিবার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে—এই হৃদয়বিদারক সংবাদ আরও একবার তুলে ধরেছে যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা ও মানবিক বিপর্যয়ের প্রকৃত চিত্র।

চিকিৎসা দানকারী পরিবারের উপর নির্মম আঘাত

উল্লেখযোগ্য যে, এই চিকিৎসক দম্পতি গাজার স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছিলেন। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন। যুদ্ধের মধ্যেও তারা রোগীদের পাশে থেকেছেন। অথচ এমন এক পরিবার, যারা জীবন বাঁচানোর জন্য দিনরাত সংগ্রাম করে গেছেন, তাদের নিজের জীবন এভাবে হারাতে হবে—এটি পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। যুদ্ধের কোনও নীতি বা আইনেই চিকিৎসা কর্মীদের উপর হামলা গ্রহণযোগ্য নয়, অথচ বাস্তবতা বারবার তার বিপরীত।উদ্ধার কাজে নিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে যখন শিশুদের মৃতদেহ একে একে বের করে আনা হচ্ছিল, তখন পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে যায়। তারা বলেন, “আমরা বহু লাশ উদ্ধার করেছি, কিন্তু একই পরিবারের ৯ শিশুকে একসাথে মৃত অবস্থায় পাওয়ার কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।” এই ধরনের ঘটনার মানসিক ধাক্কা উদ্ধারকারীদের মনেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলছে, কারণ তারা প্রতিনিয়ত অসহায় শিশু ও পরিবারকে ধ্বংস হতে দেখছেন।

মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে

এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের জন্য নয়, গোটা গাজার জন্য এক গভীর মানবিক সংকটের প্রতীক হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো আগেই জানিয়েছিল যে, গাজায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য—সব কিছুই অপ্রতুল হয়ে পড়েছে। শিশুরা যেখানে সবচেয়ে বেশি সুরক্ষার দাবিদার, সেখানে তাদেরই জীবনের দাম হয়ে উঠেছে সবচেয়ে সস্তা। গাজায় প্রতিদিন এমন অসংখ্য শিশু নির্যাতন ও মৃত্যুর শিকার হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নীরবতা

এই ভয়াবহ ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলে সীমিত প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কিছু মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে, তবে বিশ্বশক্তিগুলোর মৌনতা এবং নিষ্ক্রিয়তা অনেককেই বিস্মিত করেছে। ফিলিস্তিনি জনগণ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে—এই সংঘাতের অবসান চাই। অথচ আজও শিশুদের মৃত্যুতে যেন পৃথিবীর বিবেক নড়ে ওঠে না। প্রশ্ন উঠেছে, আর কত শিশুর রক্ত ঝরলে বিশ্ব এই যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগী হবে?

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা গাজায় হামাসের অস্ত্রাগার ও কমান্ড পোস্ট লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতিদিনই যেসব ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তার অধিকাংশই সাধারণ মানুষ ও শিশুদের জীবনের বিনাশ ঘটাচ্ছে। চিকিৎসকদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানোর যৌক্তিকতা নিয়েও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনার পরে ইসরায়েলের যুদ্ধনীতির ন্যায্যতা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *