গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৯ জন: সিভিল ডিফেন্সের তথ্য

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ জন। ফিলিস্তিনের সিভিল ডিফেন্স বাহিনী এই তথ্য জানিয়েছে। চলমান সংঘাতে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। ছবি: প্রথম আলো
গাজায় ফের প্রাণঘাতী হামলা
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ। রবিবার রাতে চালানো এই হামলা ছিল অত্যন্ত তীব্র এবং লক্ষ্যবস্তু ছিল মূলত বেসামরিক আবাসিক এলাকা। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
এই হামলার ফলে কয়েকটি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাস্তায় পড়ে থাকা ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে কাজ করছে উদ্ধারকারী দল।
কোথায় হামলা চালানো হয়?
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হামলাটি গাজার আল-নাসর ও জাবালিয়া এলাকায় সংঘটিত হয়। ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া বোমাগুলো সরাসরি বাড়িঘরের উপর আঘাত হানে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আকাশে ঘূর্ণায়মান ড্রোনের শব্দের পরপরই তীব্র বিস্ফোরণ হয়।
উদ্ধারকারীরা জানান, ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ ও আহতদের বের করে আনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যায়। বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ওইসব এলাকায়, ফলে মানুষজন মানবেতর পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

ছবি: টি হিমদু
সিভিল ডিফেন্সের বক্তব্য
গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানায়, “এটি ছিল গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ হামলা। নিহতদের মধ্যে অন্তত সাতজন নারী এবং তিনজন শিশু রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও লাশ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।”
তারা আরও জানায়, আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা ছাড়া এই ধ্বংসের মধ্যে বেঁচে থাকা মানুষদের সহায়তা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট ও পর্যাপ্ত উদ্ধার সামগ্রীর অভাব এই দুর্যোগকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
ইসরায়েলের দাবি ও প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই হামলার দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, তারা ‘হামাসের সামরিক স্থাপনায় আঘাত’ হেনেছে। তবে ফিলিস্তিনি পক্ষ বলছে, এটি ছিল সম্পূর্ণ বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা, যার কোনো সামরিক যৌক্তিকতা নেই।
আন্তর্জাতিক মহল এ ধরনের হামলার কঠোর সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো হামলার তদন্ত এবং বেসামরিক জনগণের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও এখনো কোনো আন্তর্জাতিক চাপ ইসরায়েলি কার্যক্রমে দৃশ্যমান প্রভাব ফেলছে না।
মানবিক বিপর্যয়ের দিকেই গাজা
গাজা ইতোমধ্যেই এক মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অবরোধ, চিকিৎসা সংকট, খাদ্য ও জ্বালানির অপ্রতুলতা মানুষজনকে দুর্বিষহ জীবনে ঠেলে দিয়েছে। এর মাঝে প্রতিনিয়ত বোমা হামলা ও মৃত্যু, পরিস্থিতিকে আরো বিপজ্জনক করে তুলছে।
বিভিন্ন মানবিক সংস্থা জানাচ্ছে, গাজায় বসবাসকারী প্রায় ২০ লাখ মানুষের জীবন এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো পদক্ষেপ ছাড়া এই মানবিক বিপর্যয়ের সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১৯ জন নিহতের ঘটনা একটি বড় ধরনের মানবিক উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়। বেসামরিক মানুষ যখন বারবার হামলার শিকার হন, তখন এই সংঘর্ষের ন্যায়সঙ্গততা নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসে। যুদ্ধ বন্ধে এবং মানবিক সহায়তার পথ সুগম করতে আন্তর্জাতিক গঠনমূলক হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।