মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের veto তে আটকে গেল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গাজা যুদ্ধ

গাজা সংকট

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে veto করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট আরও জটিলতর হওয়ার আশঙ্কা। ছবিঃ এএফপি

মার্কিন veto-র ফলে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যক্রমে বাধা

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে গাজার সাম্প্রতিক সংঘর্ষ বন্ধের জন্য যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার veto ব্যবহার করে ওই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছে, যা বিশ্বজুড়ে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে গাজায় চলমান সহিংসতা থামানো এবং মানবিক সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বহু দেশ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই veto-কে ‘মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ায় বড় ধাক্কা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কারণ এবং তাদের অবস্থান

মার্কিন প্রশাসন তাদের veto-র পেছনে যুক্তি দিয়েছে যে, গাজার বর্তমান সংঘাতের পেছনে ‘তীব্র সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’ এবং ‘হামাসের ভুমিকা’ রয়েছে। তারা দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো উল্লেখ নেই যা ইসরায়েলকে সুরক্ষা দিতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায় যে, তারা ইসরায়েলের ‘স্ব-রক্ষা করার অধিকার’ নিশ্চিত করতে চায় এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য সুষ্ঠু ও টেকসই সমাধানই হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির ভিত্তি।

গাজার পরিস্থিতি আরও কঠিন হচ্ছে

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের ব্যর্থতায় গাজায় মানবিক সংকট ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। বিদ্যুৎ, পানি ও চিকিৎসাসহ বেসামরিক নাগরিকদের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটানো দুশ্চর্য হয়ে পড়েছে। অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়েছে, শত শত শিশু ও নারীরা আহত বা নিহত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, সংকট চলতে থাকলে গাজার অবস্থা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। যুদ্ধবিরতি ছাড়া সহায়তা পৌঁছানো কঠিন হয়ে উঠেছে এবং ইসরায়েলি হামলার ফলে অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

মার্কিন veto

ছবিঃ রয়টার্স

আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে

মার্কিন veto-র বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি রাষ্ট্র মার্কিন সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আনতোনিও গুতেরেস যুদ্ধবিরতি জরুরি বলে আবারও জোর দিয়ে বলেছেন যে, প্রতিরোধ এবং সামরিক অপারেশন বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল এখন আরও কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যাতে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছায়।

মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী সংকটের প্রভাব

গাজায় সংঘর্ষের এই নতুন উত্থান মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক স্থিতিশীলতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ব্যাহত হলে এর ধাক্কা শুধু ওই অঞ্চলে নয়, পুরো বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর পড়বে। তেল মুদ্রাস্ফীতি, শরণার্থী সঙ্কট এবং অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা বেড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংকট বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজনও বাড়াতে পারে।

গাজার অবস্থা এমন যে, দ্রুত যুদ্ধবিরতি না হলে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। হাসপাতালে চিকিৎসার অভাব, খাদ্যের সঙ্কট, পানীয় জলের ঘাটতি এবং আশ্রয়ের অভাব জনজীবন বিপন্ন করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতারা তৎপর হয়ে গাজার জন্য ত্রাণ ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠাচ্ছে, কিন্তু সহিংসতা অব্যাহত থাকায় সেগুলো নিরাপদে পৌঁছানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দাবী করছে।

ভবিষ্যতে যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রক্রিয়ার সম্ভাবনা

বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের veto অনেককেই হতাশ করেছে, কিন্তু অনেক আন্তর্জাতিক কূটনীতিক এখনো আশা প্রকাশ করছেন যে, চাপ এবং আলোচনা মাধ্যমে দ্রুতই যুদ্ধবিরতি আনা সম্ভব হবে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে সচেষ্ট। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের স্থায়ী সমাধান ছাড়া এই ধরনের সংকট সময় সময় ফের ফিরে আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই কার্যকর কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক সহায়তা অপরিহার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *