গাজা যুদ্ধের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় বাণিজ্যের আশা করছে আরব বিশ্ব

গাজা সংকট চলমান থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক আরব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক চুক্তির প্রত্যাশা করছে। রাজনৈতিক জটিলতা থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়িক স্বার্থে দৃষ্টি রাখছে এই দেশগুলো। ছবিঃ রেটুরেস
গাজা যুদ্ধ এবং আরব অঞ্চলের উদ্বেগ
বর্তমানে গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উদ্বেগ ও অস্থিরতা তৈরি করেছে। ফিলিস্তিনি জনগণের মানবিক বিপর্যয় এবং ইসরায়েলি সেনা অভিযানে বহু প্রাণহানির খবর প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই আশা করেছিলেন যে আরব দেশগুলো কূটনৈতিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক উদ্বেগ থাকলেও অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে বেশ কিছু আরব দেশ।
গাজা সংকট সত্ত্বেও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE), কাতার ও বাহরাইনসহ বেশ কিছু উপসাগরীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা মনে করছে, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ গ্রহণ করা তাদের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে। বিশেষত, গ্লোবাল মার্কেটে মার্কিন প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও শক্তি খাতে অংশীদারিত্ব বাড়াতে চায় এই দেশগুলো।
মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন উদ্যোগ
আরব দেশগুলো বর্তমানে বৃহৎ পরিসরে মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য একাধিক অর্থনৈতিক ফোরাম, সম্মেলন ও চুক্তি সাক্ষরের উদ্যোগ নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, রিয়াদ ও দুবাইতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের বাণিজ্য বৈঠক যেখানে মার্কিন কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব বৈঠকে মূলত প্রযুক্তি, ক্লিন এনার্জি, ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্টার্টআপগুলোর ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
গাজা পরিস্থিতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেক সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন তোলা হলেও আরব নেতৃবৃন্দ অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মানবাধিকার ও রাজনৈতিক প্রশ্নগুলো ঘিরে জনপর্যায়ে প্রতিবাদ থাকলেও সরকারিভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক চুক্তি থেকে পিছু হটার কোনও ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, তারা জানেন—যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি, পুঁজি এবং প্রতিরক্ষা সহায়তা ছাড়া তাদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ধীর হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ এবং মধ্যপ্রাচ্য
যুক্তরাষ্ট্রও মধ্যপ্রাচ্যে তার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখতে চায়। গাজা যুদ্ধের সময়ও হোয়াইট হাউস ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট বারবার আরব দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র চায় না যাতে চীন কিংবা রাশিয়া এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে তাদের প্রভাব বাড়িয়ে ফেলে। এজন্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে জোর দিয়ে কৌশলগত দৃষ্টিতে আরব দেশগুলোর পাশে থাকতে চায় তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্য এখন রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার মাঠেও রূপ নিচ্ছে। যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে, তারা এই প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। তবে এই অর্থনৈতিক কূটনীতি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং মানবাধিকার ইস্যু কতখানি প্রভাব ফেলবে—তা নির্ভর করছে আগামী মাসগুলোর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর।
গাজা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ আরব জনগণের মধ্যে একটি ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, কারণ তারা মনে করেন মার্কিন নীতিই ইসরায়েলের আগ্রাসনকে সমর্থন করছে। ফলে এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরব সরকারের ঘনিষ্ঠতা জনমতের বিপরীতে যাচ্ছে। তবুও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারগুলো তাদের পথেই অটল থাকছে।