গাবতলী গরুর হাটে গরুর স্রোত, কিন্তু ক্রেতার দেখা নেই

কোরবানির পশু

গাবতলী গরুর হাটে প্রচুর গরু উঠলেও ক্রেতার অভাবে বিপাকে বিক্রেতারা। বাজারে মন্দাভাব ও দামের তারতম্যে হতাশ খামারিরা। ছবিঃ তাফসিলুল আজিজ

গরুর হাট জমজমাট, কিন্তু নেই বেচাকেনার রমরমা

ঢাকার অন্যতম বড় পশুর হাট গাবতলী গরুর হাটে এবছর গরুর সরবরাহ অনেক বেশি হলেও ক্রেতার সংখ্যা আশানুরূপ নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা খামারি ও ব্যবসায়ীরা হাটে হাজার হাজার গরু তুলেছেন, তবে তাদের অনেকেই ক্রেতার অভাবে হতাশ। ঈদুল আজহার আগমনের সময় ঘনিয়ে এলেও হাটে জমে ওঠেনি বেচাকেনা। বিক্রেতাদের অভিযোগ, ক্রেতারা হাটে এলেও দর কষাকষি করে চলে যাচ্ছেন—কেনার মনোভাব দেখা যাচ্ছে না।

গরুর দামে তারতম্য, হতাশায় খামারিরা

খামারিরা জানাচ্ছেন, তারা অনেক খরচ করে গরু লালনপালন করেছেন, কিন্তু হাটে এসে সেই পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। একেকটি মাঝারি আকৃতির গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত, কিন্তু ক্রেতারা ৫০-৬০ হাজারের বেশি দিতে রাজি নন। ফলে অনেক গরু হাটে এসেও বিক্রি হচ্ছে না। ক্রেতার স্বল্পতা ও দামের তারতম্যে খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য এটি একটি বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ক্রেতাদের মধ্যে মূল্যসচেতনতা বেড়েছে

হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম। অনেকেই বলছেন, চলমান অর্থনৈতিক চাপ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে তাঁরা আগের মতো খরচ করতে পারছেন না। ফলে অনেকেই অপেক্ষা করছেন শেষ মুহূর্তে দামে ছাড় পেলে কিনবেন। কেউ কেউ আবার অনলাইন বা অ্যাপভিত্তিক পশু কেনার দিকেও ঝুঁকছেন, যেখানে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকে এবং হোম ডেলিভারির সুবিধা পাওয়া যায়।

গাবতলী গরুর হাটে গরুর চাপ বাড়লেও হাট ব্যবস্থাপনা এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয় বলে অভিযোগ করছেন অনেকে। গরুর জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোতে অতিরিক্ত পশু তুলায় হাঁটার জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুটা জোরদার হলেও ট্রাফিক জ্যাম, পানি নিষ্কাশনের অভাব ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের ভোগান্তি বাড়িয়েছে। এতে হাটের প্রতি মানুষের আগ্রহও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খামারিদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা

অনেক খামারি জানান, তারা বছরজুড়ে গরু লালন করে মূলত কোরবানির বাজারেই বিক্রির আশায় থাকেন। কিন্তু বাজারে চাহিদা না থাকলে তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়ে। অধিকাংশ খামারি ব্যাংক ঋণ বা সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে গরু পালন করেন। গরু বিক্রি না হলে একদিকে যেমন ঋণের বোঝা বাড়বে, তেমনি পরিবার চালানোও কঠিন হয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু সহায়তা ও বাজার ব্যবস্থাপনার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *