সালাহউদ্দিনের গুম মামলা: শেখ হাসিনা ও ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ তার ‘গুম’ হওয়ার ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আইনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পড়ুন বিস্তারিত প্রতিবেদন। ছবিঃ সিরাজুল ইসলাম রুবুল
অভিযোগের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের একটি আইনি পদক্ষেপকে ঘিরে। সম্প্রতি তিনি একটি আইনি অভিযোগ দায়ের করেছেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ছয়জন বিশিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদের নাম রয়েছে। সালাহউদ্দিন দাবি করেছেন, ২০১৫ সালে তিনি ‘জোরপূর্বক গুম’ হওয়ার শিকার হন এবং এ ঘটনার পেছনে তিনি যাদের দায়ী করছেন, তারা সবাই প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ অভিযোগ দায়েরের ফলে দেশের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা
২০১৫ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হয়ে যান সালাহউদ্দিন আহমেদ, যিনি তৎকালীন বিএনপির মুখপাত্র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করে। পরে তিনি ভারতীয় রাজ্য মেঘালয় থেকে উদ্ধার হন এবং সেখানকার কর্তৃপক্ষ তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক করে। তিনি জানান, তাকে অজ্ঞাত স্থান থেকে তুলে নিয়ে চোখ বেঁধে সীমান্ত পেরিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনার তদন্ত ও বিচার চেয়ে তিনি এখন আইনি লড়াই শুরু করেছেন।
আইনি অভিযোগের বিবরণ
সালাহউদ্দিন যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সদস্য। তিনি বলেছেন, এই ঘটনাটি ছিল রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার অংশ, যার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিরোধীদের ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হয়। আইনি অভিযোগে তিনি রাষ্ট্রীয় সংস্থার অপব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বেআইনি আটক ও গুমের মতো অভিযোগ এনেছেন। এটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের আওতায় আনার জন্য আদালতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারি সূত্র অনুযায়ী এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগের বিষয়ে কোন বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে, অতীতের মতামতে সরকার বরাবরই এই ধরনের অভিযোগকে অস্বীকার করে আসছে। তারা বলেছে, সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়া সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত বিষয় এবং সরকার এর সঙ্গে জড়িত নয়। সরকারপক্ষ থেকে ধারণা দেওয়া হয়েছে, এটি বিএনপির রাজনৈতিক চাল হতে পারে যার মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা চলছে।

ছবিঃ নিউ আগে
বিএনপির প্রতিক্রিয়া ও সমর্থন
বিএনপি এই অভিযোগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। দলের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, এটি শুধু সালাহউদ্দিন আহমেদের নয়, বরং দেশে সংঘটিত সকল গুম ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার একটি প্রতীক। তারা বলছেন, এই অভিযোগের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের পথ খুলবে এবং যারা রাষ্ট্রীয় শক্তিকে অপব্যবহার করছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হবে। দলের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিষয়টি তুলে ধরার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সালাহউদ্দিনের ঘটনাকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করেছে। তারা বাংলাদেশে গুম, বেআইনি আটক ও বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড নিয়ে আগেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। Human Rights Watch, Amnesty International-এর মতো সংস্থাগুলো এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানাচ্ছে। তারা বলছে, গুম মামলা বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা দ্রুত নিরসনের প্রয়োজন।
রাজনৈতিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
সালাহউদ্দিনের এই পদক্ষেপ দেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনের রাজনীতিতে এই অভিযোগের প্রভাব ব্যাপক হতে পারে, বিশেষ করে যদি আদালত এটিকে আমলে নেয়। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ইতোমধ্যেই চলমান উত্তেজনা আরও তীব্র হতে পারে। একই সঙ্গে এই মামলা দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের নিরাপত্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।