চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ, প্রাইম মুভার চালকদের ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট

চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা প্রাইম মুভার চালকদের ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের কারণে কন্টেইনার পরিবহন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এই ধর্মঘট বন্দর কার্যক্রমে বিশাল প্রভাব ফেলেছে। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার পরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ
চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের প্রাণকেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক টন পণ্য এসে পৌঁছায় ও যায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের অংশ হিসেবে। কিন্তু সম্প্রতি প্রাইম মুভার চালকদের ১২ ঘণ্টার ধর্মঘটের কারণে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ—কন্টেইনার পরিবহন—সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। প্রাইম মুভার গাড়ি না চলায় বন্দরের কন্টেইনার ওঠানামার কাজ বন্ধ থাকায় মালবাহী জাহাজগুলো থেকে পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। এর ফলে বন্দরের সুনাম ও কার্যক্ষমতা দুটোই প্রভাবিত হচ্ছে। বন্দর সংলগ্ন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ট্রাকিং সেক্টরও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। ধর্মঘটের প্রভাবে কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এর প্রতিক্রিয়া দেশের অর্থনীতিতেও ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করেছে।
ধর্মঘটের কারণ ও চালকদের দাবি
প্রাইম মুভার চালকদের ধর্মঘটের মূল কারণ গুলো বেশ দীর্ঘ এবং বহুমাত্রিক। চালকরা অভিযোগ করেন যে, তাদের কাজের পরিমাণ বাড়লেও বেতন বৃদ্ধি বা কাজের নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কোনও সন্তোষজনক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। অধিকাংশ চালক জানান, কাজের চাপের তুলনায় তাদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অত্যন্ত নগণ্য। এছাড়াও, তারা স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার অভাবও তুলে ধরেছেন, যা গাড়ি চালানোর সময় অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারা দাবি করছেন যে, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও লজিস্টিক কোম্পানিগুলো তাদের কষ্ট ও শ্রমের যথাযথ সম্মান প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধর্মঘট ও আন্দোলনের ঝুঁকি রয়েছে বলে কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বন্দর কার্যক্রমে প্রভাব ও ক্ষতি
ধর্মঘটের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর আজকালকার চাঞ্চল্যকর ও ব্যস্ত সময়েও কার্যত নীরব। বন্দর থেকে কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। কন্টেইনার ওঠানামার বিলম্বের কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্যের সঠিক সময়মতো ডেলিভারি করতে পারছেন না, যা আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্যতা কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে রপ্তানি পণ্যগুলোর জন্য এটি বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করেছে, কারণ সময়মত পণ্য না পৌঁছালে বিদেশি ক্রেতারা অন্য উৎস খোঁজার প্রবণতা দেখাতে পারেন। তদুপরি, বন্দর এলাকায় জমে থাকা কন্টেইনার ও মালামাল নিকট ভবিষ্যতে পরিচালনার জটিলতা তৈরি করবে। এছাড়া, অন্যান্য লজিস্টিক ও পরিবহন খাতেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা অর্থনীতির সামগ্রিক গতিকে অবরুদ্ধ করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ধর্মঘটের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। তারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চালকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে এবং এই আন্দোলন দ্রুত শেষ করার জন্য বৈঠকগুলো চলমান রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও ভাবছে, যার মাধ্যমে কিছু পরিমাণ কন্টেইনার পরিবহন চালু রাখা যাবে। তবে, এটি শুধুমাত্র সাময়িক ব্যবস্থা, কারণ চালক ছাড়া কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, চালকদের বৈধ দাবি গুলো গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হবে এবং দ্রুত সমাধান খোঁজা হবে যাতে ভবিষ্যতে এরকম সমস্যা না হয়। তবুও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বড় ধরনের আর্থিক ও সুনামিক ক্ষতি আসতে পারে বলে সতর্কবার্তা প্রদান করা হয়েছে।
ধর্মঘটের ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাব্য সমাধান
এই ধর্মঘটের দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ যতটা কম, ততটাই ভালো। উভয় পক্ষের মধ্যে দ্রুত সমঝোতা গড়ে উঠা জরুরি, যাতে বন্দর কার্যক্রম দ্রুত স্বাভাবিক হয়। চালকদের দাবি ও সমস্যাগুলো সন্তোষজনকভাবে মেটাতে হলে সরকার, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি স্থায়ী কমিটি গঠন করা উচিত। এই কমিটি নিয়মিত বৈঠক করে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা ও বেতন কাঠামো নিয়ে উন্নত পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে ধর্মঘটের মতো ঘটনা এড়াতে শ্রমিকদের সঙ্গে চলমান সংলাপ ও যোগাযোগ রাখা হবে। সরকারের পক্ষ থেকেও শ্রম আইন ও কর্মপরিবেশ উন্নত করার দিকে নজর দেওয়া জরুরি, যাতে দেশের অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর চালু ও সচল থাকে।