জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা শিগগির সমাধানে আশাবাদ পরিকল্পনা উপদেষ্টার

পরিকল্পনা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয় সংকট

পরিকল্পনা উপদেষ্টার মতে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস ও অবকাঠামোগত সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির বাস্তবতা এবং সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন। ছবিঃ প্রথম আলো ইংলিশ

বর্তমান পরিস্থিতির চিত্র

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত। পুরান ঢাকার মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাধিক ভবনে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। নেই যথাযথ ক্লাসরুম, পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা বা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত স্থান। এ অবস্থায় মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক বার্তা পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো সরকারের নজরে রয়েছে এবং অচিরেই একটি স্থায়ী ও কার্যকর সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক এবং আমরা এটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছি।” উপদেষ্টার এই বক্তব্য শুধু প্রশাসনিক মহলে নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীর মাঝেও নতুন আশার বার্তা এনেছে।

শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়ে আসছেন। আন্দোলন, স্মারকলিপি, মানববন্ধন—প্রতিটি মাধ্যমেই তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনগত সমস্যাগুলো একাডেমিক ভবিষ্যৎকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই ভবন পরিবর্তন করতে করতে ক্লাসে পৌঁছাতে দেরি করেন, যা শিক্ষার মনোযোগ নষ্ট করে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে একাধিক প্রস্তাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এসব প্রস্তাবনায় রয়েছে আধুনিক ক্যাম্পাস, বহুতল একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি, গবেষণা ল্যাব এবং আবাসিক হল নির্মাণের পরিকল্পনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপযুক্ত জায়গা নির্ধারণ ও বাজেট অনুমোদনের কাজ চলমান রয়েছে।

পুরান ঢাকার সীমাবদ্ধতা

পুরান ঢাকা ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হলেও, আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য এটি অনুপযুক্ত। সরু রাস্তা, যানজট, পর্যাপ্ত খোলা জায়গার অভাব এবং পরিবেশগত সমস্যা একটি শান্তিপূর্ণ ও উপযোগী একাডেমিক পরিবেশ তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ফলে, আধুনিক শিক্ষার জন্য স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করেন, স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় উচ্চশিক্ষার মান ধরে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা বলছেন, গবেষণা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একটি পরিপূর্ণ ক্যাম্পাসই পারে এই সংকট থেকে মুক্তি দিতে।

শিক্ষা ব্যবস্থা

ছবিঃ প্রথম আলো ইংলিশ

সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইতিমধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি উন্নয়ন প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এতে উল্লেখ রয়েছে ১০ একর জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাস, ডিজিটাল ক্লাসরুম, আধুনিক গবেষণাগার এবং আবাসিক সুবিধাসম্পন্ন হোস্টেল নির্মাণের কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি শিক্ষার মানে এক বিশাল পরিবর্তন আনবে।

বর্তমান সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতির একটি বড় অংশ হলো ‘উচ্চশিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা’। এই নীতির আলোকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধানকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখা হচ্ছে। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে হতে হবে টেকসই, আধুনিক এবং গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ভবিষ্যতের পথ ও চ্যালেঞ্জ

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত এসেছে, বাস্তবায়নের পথে এখনো বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাজেট বরাদ্দ, জমি অধিগ্রহণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং সময়মতো কাজ শেষ করাই হবে মূল চাবিকাঠি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাতে হতাশা না জন্মায়, তার জন্য প্রশাসনের উচিত সময়মতো অগ্রগতি জানানো এবং কার্যকর সংলাপ বজায় রাখা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *