জবি’র ‘মার্চ টু যমুনা’তে পুলিশের হামলা, আহত ২৫ জন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচিতে পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডে আহত হয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২৫ জন। পড়ুন বিস্তারিত প্রতিবেদন। ছবিঃ বিসনেস
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা “মার্চ টু যমুনা” নামে একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির আয়োজন করে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করে। কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল দেশের সমসাময়িক সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রতিবাদ জানানো। আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করেন। তারা একটি গণতান্ত্রিক দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে যমুনা টিভির সামনে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিলেন।
পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার
তবে শান্তিপূর্ণ এ মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয় এবং কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশ কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ এবং সাউন্ড গ্রেনেড লব করে। এতে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে।
ঘটনাস্থলে অবস্থানরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনেকেই আহত হন। তাদের অনেকে মাটিতে পড়ে যান, কেউ কেউ নিশ্বাসের কষ্টে ভুগতে থাকেন। স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলেও জানা গেছে।
আহতদের সংখ্যা ও অবস্থা
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুলিশি হামলায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৭ জন শিক্ষক এবং ১৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, পুলিশ কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই হামলা চালিয়েছে এবং এমন আচরণ তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং ছাত্র সংগঠনগুলো এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শিক্ষার্থীদের মিছিলের কোনো অনুমতি ছিল না এবং তারা জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল। পুলিশ বলেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলেন এবং প্রশাসনের এ ধরনের আচরণ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকবৃন্দ এই ঘটনার ন্যায়বিচার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীতে আরও বড় কর্মসূচির হুমকিও দিয়েছেন তারা।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে ঘটনার প্রভাব
সামাজিক বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, রাষ্ট্রের তরফ থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমাজের প্রতি এই ধরনের আচরণ দেশের গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা উচিত ছিল, শক্তি প্রয়োগ নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ শিক্ষার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে। এখন প্রয়োজন প্রশাসনের আত্মসমালোচনা ও শিক্ষার্থী-শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ।