জাতীয় ঐক্য রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান: সমৃদ্ধির পথে নতুন দিশা

বাংলাদেশ রাজনীতি

প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় ঐক্য রক্ষার উদ্যোগ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে বিশ্লেষণ। জানুন কীভাবে ঐক্যের ভিতর দিয়েই গড়ে উঠতে পারে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ছবিঃ ক্যা গোব ফেইসবুক

জাতীয় ঐক্য রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টার অঙ্গীকার
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে যখন নানা ধরনের বিভক্তি ও মতপার্থক্য ঘনীভূত হচ্ছে, তখন জাতীয় ঐক্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে একটি দৃঢ় বার্তা দিয়েছেন দেশের প্রধান উপদেষ্টা। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে আগে প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও সংহতি। তার মতে, একটি জাতি তখনই উন্নয়নের পথ ধরে এগোতে পারে, যখন তার ভেতরের অংশগুলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ও বোঝাপড়ার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, তবে তা যেন জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ব্যাঘাত না ঘটায়—এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যের পথে আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে বিশেষভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন দলীয় চিন্তা ও স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের সার্বিক কল্যাণে কাজ করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, রাজনীতি যদি জনসেবার মাধ্যম হয়, তাহলে সেটির মূলে থাকা উচিত সহনশীলতা ও সম্মিলিত চিন্তা। দেশের সব রাজনৈতিক দলকে একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্মে এসে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “দায়িত্বশীল নেতৃত্ব তখনই গড়ে ওঠে, যখন তা দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়।” তার এই বক্তব্য দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি সম্ভাব্য সমাধান হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

উন্নয়নের ভিত্তি হিসেবে জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব
জাতীয় ঐক্যকে উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আগে প্রয়োজন সবার মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সম্মিলিত উদ্যোগ। একক কোনো দলের চেষ্টায় নয়, বরং জাতীয় ঐক্যের ভিতরে দাঁড়িয়েই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। তিনি আরও বলেন, “একটি বিভক্ত সমাজ কখনোই সমৃদ্ধ হতে পারে না। আমাদের প্রয়োজন এমন একটি সমাজব্যবস্থা, যেখানে জনগণ, সরকার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একই লক্ষ্যে কাজ করে।” তার এই বার্তা দেশের উন্নয়ন নীতিতে নতুন গতি আনতে পারে।

তরুণ সমাজই জাতীয় ঐক্যের চালিকা শক্তি
তরুণ প্রজন্মকে জাতীয় ঐক্যের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে দেখছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “যুব সমাজই পারে সমাজের ভেদাভেদ দূর করে একটি ইতিবাচক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।” বর্তমানে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তরুণদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করছে, যার ইতিবাচক ব্যবহারের মাধ্যমেই দেশের ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নৈতিকতা ও নাগরিক দায়িত্ববোধ শেখানোর ওপর জোর দেন এবং বলেন, “একজন সচেতন তরুণ শুধু নিজের ভবিষ্যৎই গড়ে না, বরং পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার দায়িত্ব নিতে পারে।” সরকারের পক্ষ থেকে তরুণদের জন্য নতুন নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করার কথাও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা

ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন

সামাজিক ও ধর্মীয় সহনশীলতার পুনর্গঠন জরুরি
প্রধান উপদেষ্টা সামাজিক ও ধর্মীয় সহনশীলতার গুরুত্বের কথা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্ম, জাতিগোষ্ঠী ও সংস্কৃতি সহাবস্থান করছে। এই বৈচিত্র্য আমাদের শক্তি—না যে দুর্বলতা।” সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মীয় উসকানি ও বিভাজনের কিছু ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ধর্মের নামে বিভাজন নয়, বরং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও সহনশীলতাই হতে হবে আমাদের নীতিনির্ধারণের ভিত্তি।” তিনি শিক্ষাব্যবস্থা ও গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, সমাজে সহনশীলতা ও সম্প্রীতির চর্চা বাড়াতে হলে এগুলোর ভূমিকাকে জোরদার করতে হবে।

অর্থনৈতিক সমতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস
জাতীয় ঐক্যের আরেকটি মূল স্তম্ভ হিসেবে অর্থনৈতিক সমতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “একটি দেশ তখনই প্রকৃত অর্থে ঐক্যবদ্ধ হয়, যখন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ উন্নয়নের ফল ভোগ করতে পারে।” দরিদ্র, প্রান্তিক এবং পেছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো আরও কার্যকর ও লক্ষ্যভিত্তিক করতে হবে যাতে সত্যিকার অর্থে দরিদ্ররা উপকৃত হয়। এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে সমাজের প্রত্যেক মানুষ নিজেকে দেশের উন্নয়নের অংশ হিসেবে ভাবতে পারবে, যা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করবে।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধিতে অভ্যন্তরীণ ঐক্যের প্রভাব
আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে হলে অভ্যন্তরীণ ঐক্য অপরিহার্য—এমনই অভিমত প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে যে ধরনের সমৃদ্ধি আমরা দেখি, তার পেছনে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় ঐক্য মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।” বৈশ্বিক বিনিয়োগ, কূটনৈতিক সম্পর্ক ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এজন্য জাতীয় ঐক্য শুধু অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে নয়, বরং বৈশ্বিক প্রসঙ্গেও গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *