জাতীয় নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণা না করায় বিএনপির হতাশা

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচন রোডম্যাপ প্রকাশ না করায় বিএনপি গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে। জেনে নিন এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কী প্রতিক্রিয়া। ছবিঃ প্রথম আলো ইংলিশ
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সাধারণ জনগণ
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহল এবং উদ্বেগ বিরাজ করছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো জাতীয় নির্বাচন রোডম্যাপ প্রকাশ না করায় বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যা না থাকায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। বিএনপি মনে করছে, সময় মতো নির্বাচনী দিকনির্দেশনা না দিলে সরকারের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করতে চাইছে। একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন থাকলেও তা কার্যকরভাবে কাজ করছে না, যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।” তিনি আরও বলেন, “যদি সরকার সত্যিই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়, তবে অবিলম্বে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা দিতে হবে।” তার মতে, জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় হচ্ছে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ।
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন, সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন, সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান এবং নির্বাচন কমিশনের নিরবতা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাদের মতে, এই দেরি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হতে পারে, যার মাধ্যমে একটি একতরফা নির্বাচন আয়োজনের পথ সুগম করা হচ্ছে। বিশেষ করে, আগের নির্বাচনগুলোতে বিএনপির অংশগ্রহণ ও নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে নিরপেক্ষ পরিকল্পনা জরুরি ছিল। বিএনপি বারবার বলে আসছে যে, একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এক ভিন্ন বক্তব্য এসেছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে, এবং সরকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে না।” তিনি আরও বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে এবং সেই অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নেওয়া হবে।” তবে বিএনপি এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক কৌশল ও ‘দায় এড়ানোর প্রচেষ্টা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা বলছে, কার্যত সরকারই নির্বাচন কমিশনের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে, যার ফলে রোডম্যাপ এখনো অনুপস্থিত।
জনগণের মধ্যেও নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে সংশয় এবং আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। অনেকেই ভাবছেন, নির্ধারিত সময়ের আগে যদি পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি ঘোষণা না করা হয়, তাহলে তা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, একটি স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী রোডম্যাপ থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নিতে পারবে এবং সহিংসতার ঝুঁতিও কমে আসবে। তাছাড়া, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক মহলও একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপের ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচনকে মূল্যায়ন করে থাকে।