১২ দিনের বিক্ষোভে স্থবির হয়ে পড়েছে সেবা কার্যক্রম

টানা ১২ দিন ধরে চলা বিক্ষোভের কারণে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবা স্থবির হয়ে পড়েছে। নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদন থেকে। ছবিঃ প্রাবির দাশ
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
টানা ১২ দিন ধরে চলমান একটি বৃহৎ গণবিক্ষোভ পুরো শহরজুড়ে পরিষেবা কার্যক্রমকে কার্যত স্থবির করে ফেলেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, পরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল একটি নির্দিষ্ট দাবিকে কেন্দ্র করে, যা পরে সার্বজনীন রূপ ধারণ করে। সংশ্লিষ্ট আন্দোলনকারীরা প্রতিদিন রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ কিন্তু দৃঢ় প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মতে, কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতা এই আন্দোলনের মূল কারণ।
পরিষেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা
বিক্ষোভের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে নাগরিক সেবা খাতে। সরকারি অফিসে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ ঘুরে ফিরে হতাশ হচ্ছেন। জমি রেজিস্ট্রেশন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্যাক্স প্রদানসহ গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। এমনকি হাসপাতালে জরুরি সেবা ব্যতীত অন্যান্য পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের অভিযোগ, বহু দিন ধরে অপেক্ষমাণ কাজ এই বিক্ষোভের কারণে আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি।
এই আন্দোলনের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পরীক্ষার সময়সূচি পেছানো হয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় চরম বিঘ্ন ঘটছে। অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মতে, সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে একটি প্রজন্ম বড় ধরণের শিক্ষা সংকটে পড়বে।
পরিবহন ও ব্যবসা খাতে প্রভাব
সড়কে চলাচলরত যানবাহন সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, ফলে যাত্রী সাধারণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মজীবী মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী শ্রেণি চরম বিপাকে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাল পরিবহন করতে না পারায় সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়ছে, যার কারণে মূল্যস্ফীতি এবং জিনিসপত্রের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেক দোকানপাট আংশিক সময় খোলা থাকলেও ক্রেতা না থাকায় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন, সরকারের নির্দিষ্ট কিছু নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন এবং তারা এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চান। তবে তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না। তারা প্রতিদিন প্ল্যাকার্ড, মাইক্রোফোন ও গণজমায়েতের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। কিছু এলাকায় প্রতীকী অনশন ও মানববন্ধনও হয়েছে। আন্দোলনকারীদের মতে, সরকার যদি যথাযথভাবে সংলাপ শুরু করে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান
সরকার প্রথমদিকে আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিলেও, এখন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্রিয় হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বৈঠকে বসেছে। প্রধানমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জনসাধারণের দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে সরকার এখনও সরাসরি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি, ফলে আন্দোলনের অবসান বা পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত।