ট্রাম্পের ঘোষণা: সিরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সৌদি চুক্তি $৬০০ বিলিয়ন

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

ট্রাম্প সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বড় চুক্তি করেছেন। এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন। ছবিঃ প্রথম আলো ইংলিশ

সিরিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা ট্রাম্পের

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক আলোচিত ঘোষণায় জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত বাশার আল-আসাদের সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গৃহযুদ্ধজনিত সহিংসতার জবাবে আরোপ করা হয়েছিল। ট্রাম্পের মতে, নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধুমাত্র সিরিয়ার সাধারণ জনগণের কষ্ট বাড়িয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক অবস্থান দুর্বল করেছে। তাঁর দাবি, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক বার্তা দেওয়া হবে যে, যুক্তরাষ্ট্র চায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও পুনর্গঠনের জন্য একটি অংশীদার হিসেবে ভূমিকা রাখতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি একধরনের কৌশলগত কূটনীতি যার মাধ্যমে ট্রাম্প আবারও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত দুটি দিক থেকে নজরকাড়া। একদিকে তিনি সিরিয়ার প্রতি একটি কৌশলগত নমনীয়তা প্রদর্শন করছেন, অন্যদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করছেন। কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনের জন্য নিজেকে একজন শক্তিশালী আন্তর্জাতিক নেতৃত্বদাতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছেন এবং এর অংশ হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, সিরিয়ায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আসাদ সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ কমিয়ে দেবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত থাকতে পারে। আবার কেউ কেউ এটিকে এক নতুন বাস্তববাদী কূটনীতির প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়।

সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল চুক্তি

এই ঘোষণার পাশাপাশি ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে একটি ব্যাপক আকারের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক চুক্তির কথাও প্রকাশ করেন যার পরিমাণ ৬০০ বিলিয়ন ডলার। এই চুক্তির আওতায় সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি, জ্বালানি প্রকল্প, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিখাতে যৌথ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ট্রাম্পের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে শুধু অর্থনৈতিক মুনাফাই নয়, বরং এটি সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা রাখবে। এই ধরনের বৃহৎ চুক্তি ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং জ্বালানি নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ট্রাম্প ঘোষণা

ছবিঃ টিআরটি গ্লোবাল

মার্কিন অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

ট্রাম্পের এই ঘোষণার পরপরই মার্কিন রাজনীতিতে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ডেমোক্র্যাট দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাঁদের মতে, সিরিয়ায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী একটি সরকারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া একটি ভয়ানক বার্তা দেবে। তারা এটিকে ‘নৈতিক অবক্ষয়ের’ একটি দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে রিপাবলিকান দলের ভেতরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে— কেউ কেউ এই পদক্ষেপকে অর্থনৈতিক বিচারে ইতিবাচক বলে সমর্থন করলেও অনেকেই মনে করছেন এটি দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস করতে পারে। বিষয়টি এখন কংগ্রেসে আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এবং পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এর প্রভাব পড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ প্রভাব

ট্রাম্পের এই ঘোষণা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, সিরিয়ার বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক নয়, তাই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এখনই উপযুক্ত নয়। বিপরীতে রাশিয়া ও চীন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী কূটনৈতিক রূপান্তর’ হিসেবে অভিহিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও সৌদি চুক্তি মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র আবারও সক্রিয় এবং প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে চায়। এই পরিবর্তন ভবিষ্যতের সংঘাত, জোটবদ্ধতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *