ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরছে, স্থিতিশীল রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ

ডলার বাজারে সাম্প্রতিক ভারসাম্য এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল থাকা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। আমদানি ব্যয় কমা, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকিতে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে পরিস্থিতি। ছবিঃ প্রথম আলো ইংলিশ
ডলার বাজারে স্বস্তির হাওয়া ফিরছে
গত কয়েক মাস ধরে দেশের ডলার বাজারে যে অস্থিরতা বিরাজ করছিল, তা ধীরে ধীরে কমে আসতে শুরু করেছে। ডলারের রেট বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানিকারক ও সাধারণ জনগণ বেশ কিছুটা উদ্বেগে ছিল। তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য আসতে থাকায় বাজারে স্বস্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্থিতিশীলতা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, বিশেষ করে আমদানি-নির্ভর খাতগুলোতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কার্যকর ভূমিকা রাখছে
বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চলতি অর্থবছরে কয়েক দফা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে এবং বাজারে হস্তক্ষেপ করেছে। এই হস্তক্ষেপের ফলে একদিকে যেমন বাজারে তারল্য বেড়েছে, অন্যদিকে ডলারের রেট অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেড়ে যাওয়াও নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত সীমার মধ্যে ডলার বিক্রির নির্দেশনা দেওয়ায় খোলা বাজারে কালোবাজারির সুযোগ কমেছে।
প্রবাসীদের পাঠানো বৈধ রেমিট্যান্স বাড়ছে, যা ডলার বাজারে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ সরকার রেমিট্যান্সে ২.৫% প্রণোদনা দিয়ে আসছে, যার ফলে অনেক প্রবাসী হুন্ডি বা অবৈধ পথে টাকা পাঠানো বন্ধ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে ফিরে আসছেন। গত মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের মাসের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি। এই বাড়তি ডলার সরবরাহ বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য হ্রাসে আমদানি ব্যয় কমেছে
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য কাঁচামালের দাম কিছুটা কমেছে। এর ফলে বাংলাদেশে আমদানি ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। ডলার রেট বেড়ে যাওয়ার সময় যে অতিরিক্ত খরচের চাপ তৈরি হয়েছিল, এখন তা কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমদানি ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যে ভারসাম্য ফিরছে এবং দেশের মুদ্রা চাপের মধ্যে থেকেও ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছ

ছবিঃ ডেইলি ষ্টার
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রয়েছে। যদিও কিছু সময় আগে এটি ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল, তবে সাম্প্রতিক স্থিতিশীলতা বাজারে আস্থার সঞ্চার করছে। রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স এবং সীমিত আমদানি খরচ মিলিয়ে রিজার্ভে বড় ধরনের পতন হয়নি। দীর্ঘমেয়াদে এই রিজার্ভ দেশের অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক মানে স্থিতিশীল রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ডলার সংকটের সময় অনেক আমদানিকারক এবং বিনিয়োগকারী লেনদেনে দ্বিধায় ছিলেন। তবে বর্তমান স্থিতিশীল পরিস্থিতি তাদের মধ্যে নতুন করে আস্থা ফিরিয়ে আনছে। বিশেষ করে শিল্পপতি ও আমদানি-নির্ভর উদ্যোক্তারা এখন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে পারছেন, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি ফিরিয়ে আনবে। সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পেও বিদেশি অর্থায়ন সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ প্রবণতা সম্পর্কে বিশ্লেষকদের মতামত
বিশ্লেষকদের মতে, ডলার বাজারের স্থিতিশীলতা দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে সরকারের রেমিট্যান্স প্রণোদনা, রপ্তানি খাতে সহায়তা এবং বাজার পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়া জরুরি। যদি আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন করে কোনো সংকট না দেখা দেয়, তাহলে এই ধারা বজায় রাখা সম্ভব। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখা এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়ক হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার যৌথভাবে পরিকল্পনা করছে যাতে ডলার বাজারে ভবিষ্যতেও অস্থিরতা তৈরি না হয়। বাজেটে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রণোদনা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে বৈদেশিক চুক্তি করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এসব উদ্যোগের ফলে ডলার সরবরাহ নিয়মিত রাখা সম্ভব হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।