ডায়াগনস্টিক খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক স্বাস্থ্য বীমা চালুর সুপারিশ

স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার কমিশন ডায়াগনস্টিক খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক স্বাস্থ্য বীমা চালুর সুপারিশ করেছে, যা দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে। ছবি: ডেইলি ষ্টার
স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার: ডায়াগনস্টিক খরচ নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক স্বাস্থ্য বীমা চালুর সুপারিশ
স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার খরচ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে, যা রোগীদের আর্থিকভাবে চাপে ফেলছে। এই প্রেক্ষাপটে, স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার কমিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে ডায়াগনস্টিক খরচ নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক স্বাস্থ্য বীমা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে।
জাতীয় ‘আবশ্যিক ডায়াগনস্টিক তালিকা’ প্রণয়নের প্রস্তাব
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশিকা এবং দেশের রোগের প্রকোপ বিবেচনা করে একটি জাতীয় ‘আবশ্যিক ডায়াগনস্টিক তালিকা’ (Essential Diagnostics List – EDL) প্রণয়ন করা উচিত। এই তালিকাটি সকল সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরির জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে, যা ডায়াগনস্টিক সেবার মান উন্নয়ন এবং খরচ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার নির্ধারিত মূল্য নির্ধারণ
বর্তমানে, একই ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন কেন্দ্রে ভিন্ন ভিন্ন মূল্য নেওয়া হয়, যা রোগীদের জন্য বিভ্রান্তিকর এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিকর। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত মূল্য নির্ধারণ করা উচিত, যাতে রোগীরা সঠিক ও নির্ভরযোগ্য সেবা পেতে পারেন এবং অতিরিক্ত খরচের শিকার না হন।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মান নির্ধারণে গ্রেডিং সিস্টেম
রোগীদের সচেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা এবং সেবার মান উন্নয়নের জন্য, কমিশন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের জন্য একটি পারফরম্যান্স-ভিত্তিক গ্রেডিং সিস্টেম চালুর প্রস্তাব করেছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে রোগীরা সেবার মান সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন এবং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
সামাজিক স্বাস্থ্য বীমা (SHI) চালুর প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশই ব্যক্তিগত খরচের মাধ্যমে মেটানো হয়, যা অনেক রোগীর জন্য আর্থিকভাবে অসম্ভব হয়ে পড়ে। কমিশনের প্রতিবেদনে বাধ্যতামূলক সামাজিক স্বাস্থ্য বীমা (Social Health Insurance – SHI) চালুর সুপারিশ করা হয়েছে, যা রোগীদের চিকিৎসার ব্যয়ভার কমাতে এবং স্বাস্থ্য খাতে একটি স্থিতিশীল অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা ও উদাহরণ
কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো সফলভাবে সামাজিক স্বাস্থ্য বীমা চালু করেছে, যা তাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও সাশ্রয়ী করেছে। বাংলাদেশও এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজস্ব স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে পারে।
দেশের বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা অবস্থা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ১৯,৬২৭টি নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং ৩৫,৫৯৭টি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এই বিশাল সংখ্যক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মান ও খরচের বৈচিত্র্য রোগীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবায় সমতা ও সাশ্রয় নিশ্চিতকরণ
স্বাস্থ্য খাতে এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হলে, দেশের সাধারণ মানুষ আরও সাশ্রয়ী ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পেতে সক্ষম হবেন। এটি শুধু রোগীদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।