নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে আয়োজনের দাবি তারেক রহমানের

তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। বিস্তারিত পড়ুন এই প্রতিবেদন। ছবিঃ তানভীর আহমেদ

তারেক রহমানের নতুন বক্তব্য

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক ভার্চুয়াল রাজনৈতিক আলোচনায় দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে, বর্তমান সরকার যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, তাহলে তাদের উচিত হবে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন করা। তারেক রহমানের এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, কারণ এটি সরাসরি সরকারের নির্বাচন পরিকল্পনা এবং সময়সীমাকে চ্যালেঞ্জ করছে। তিনি আরও বলেন, এই সময়সীমা অতিক্রম করলে দেশে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, যা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

তারেক রহমান নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন সরকারের মনোনীত এবং জনগণের বিশ্বাস হারিয়েছে। তাঁর মতে, এই কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষভাবে সম্ভব নয় এবং জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় তারা ব্যর্থ। তিনি বলেন, যদি প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তবে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, এবং এই নির্বাচন অবশ্যই ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। তিনি দাবি করেন, জনগণের পক্ষে থেকে বিএনপি সবসময় একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার থাকবে এবং কমিশনের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর

তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আজ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আবশ্যক। তিনি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে সরকারকে নির্বাচন বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করে। তাঁর মতে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা না হলে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ণ হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ, সহায়তা ও কূটনৈতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই তারেক রহমান এই সংকট নিরসনে সময়সীমা নির্ধারণের উপর জোর দেন।

ক্ষমতাসীন দলের প্রতিক্রিয়া

তারেক রহমানের বক্তব্যের পরপরই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলন ও গণমাধ্যমে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেন। তাঁরা বলেন, তারেক রহমান বিদেশে বসে রাজনৈতিক উস্কানি দিচ্ছেন এবং সংবিধান পরিপন্থী দাবি তুলছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, বর্তমান সরকার সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন আয়োজন করবে এবং কোনো অরাজনৈতিক চাপে নির্বাচন এগিয়ে নেওয়া হবে না। তাঁদের মতে, বিএনপির মূল লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা এবং সরকারের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ করা। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বারবার এই কথাই বলেন যে, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা এবং তারা সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।

বিএনপির আন্দোলনের প্রস্তুতি

তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেছেন, যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হয়, তবে বিএনপি দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনে নামবে। তিনি বলেন, জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে নামা হবে এবং সরকারকে বাধ্য করা হবে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন দিতে। এরই মধ্যে বিএনপি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করেছে এবং বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ ও জনমত গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারা একাধিক স্তরে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে যাতে জনসম্পৃক্ততা বজায় থাকে এবং নিরাপত্তাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখেও শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবির পক্ষে সোচ্চার থাকা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *