ঢাকাবাসীর দাবি: মেট্রোরেল চলুক আরও দীর্ঘ সময় ধরে

মেট্রোরেল ঢাকা

ঢাকার নাগরিকরা মেট্রোরেলের সময়সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। বর্তমান সার্ভিসের সময় সীমিত থাকায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। রাত পর্যন্ত চালু হলে মিলবে প্রকৃত সুবিধা। ছবি: প্রথম আলো

সীমিত সময়ের মেট্রোরেল সার্ভিসে যাত্রীদের ভোগান্তি

ঢাকা শহরের জনগণের যাতায়াত ব্যবস্থা আধুনিকায়নে মেট্রোরেল একটি আশার আলো হয়ে এসেছে। তবে যাত্রীরা এখন অভিযোগ করছেন, মেট্রোরেল সার্ভিসের সময় সীমিত থাকায় প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় তারা কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাচ্ছেন না। সকাল ও সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে ট্রেন না থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে আবারো বাস বা রিকশার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ফলে মেট্রোরেলের উপযোগিতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে কিছুটা হতাশা দেখা দিয়েছে।

যাত্রীরা কী বলছেন?

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে অফিসগামী কর্মজীবীরা জানিয়েছেন, সকালে অফিসে যাওয়ার সময় মেট্রোরেল সুবিধা পেলেও, সন্ধ্যায় কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় এটি আর চালু থাকে না। বিশেষ করে গুলশান, উত্তরা ও মিরপুর এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বিকাল ৮টা বা ৯টা পর্যন্ত সার্ভিস চালু থাকলে তারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে মেট্রোরেলেই চলাচল করতেন। শিক্ষার্থীরাও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে ফিরতে গিয়ে তারা এই আধুনিক পরিবহন ব্যবহার করতে পারছেন না।

কর্তৃপক্ষের অবস্থান

মেট্রোরেল পরিচালনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও তারা ধাপে ধাপে পুরো অপারেশনাল সময়সীমা চালু করার দিকে যাচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি, স্টাফ ট্রেনিং, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়গুলো ধাপে ধাপে স্থাপন করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত জনবল ও শক্ত অবকাঠামো, যা এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। তবে তারা জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

ঢাকা শহরে দীর্ঘ সময়ের মেট্রোরেল চালুর গুরুত্ব

বিশ্বের অন্যান্য বড় শহরের মত ঢাকাতেও গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে হলে মেট্রোরেল সারাদিন ও রাত পর্যন্ত চালু রাখা অত্যন্ত জরুরি। যানজট, দূষণ ও সময় অপচয় রোধে এই আধুনিক পরিবহন অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে। যাত্রীদের নিয়মিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সময় বাড়ানো আবশ্যক।

মেট্রোরেল সময়সূচি

ছবি: নিউ আগে

তুলনামূলক বিশ্লেষণ: অন্যান্য শহরের অভিজ্ঞতা

টোকিও, দিল্লি, সিঙ্গাপুর বা লন্ডনের মতো শহরে মেট্রোরেল সার্ভিস ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। এসব শহরের অভিজ্ঞতা বলছে, যত বেশি সময় সার্ভিস চালু থাকে, তত বেশি যাত্রী এটিকে গ্রহণ করে। বাংলাদেশেও একই রকম সুবিধা চালু হলে এটি মানুষকে ব্যক্তিগত গাড়ি বা বাসের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে সাহায্য করবে এবং গণপরিবহন ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করবে।

মনোভাব ও প্রত্যাশা

মেট্রোরেল কেবল একটি পরিবহন ব্যবস্থা নয়, এটি আধুনিক নগর উন্নয়নের প্রতীক। সাধারণ যাত্রীরা মনে করেন, এমন একটি বড় প্রকল্প যদি জনগণের ব্যবহারযোগ্য না থাকে, তবে তার মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে পারে। তারা চান, ঢাকা শহরের নাগরিকরা যেন সর্বোচ্চ সুবিধা পান, এবং এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতি যেন তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে সহজতর করে তোলে।

সরকারের দায়িত্ব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সরকার যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, জনবল বৃদ্ধি করে এবং পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেয়, তবে মেট্রোরেল সার্ভিস সময়সীমা সহজেই বাড়ানো সম্ভব। দেশের নগরায়ন ও আধুনিকায়নের এই গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি বাস্তবায়ন হলে এটি হবে বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী উন্নয়ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *