তিয়ানানমেন স্কয়ার নিয়ে মার্কো রুবিওর মন্তব্যে চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

তিয়ানানমেন স্কয়ার গণহত্যা নিয়ে মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিওর বক্তব্যকে ‘রাজনৈতিক আক্রমণ’ বলে কড়া ভাষায় প্রত্যাখ্যান করল চীন। বেইজিং বলছে, এটি ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের স্পষ্ট প্রমাণ। ছবিঃ প্রথম আলো এবং ; ইশ
মার্কো রুবিওর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে চীনের ক্ষোভ
সম্প্রতি মার্কিন সিনেটর মার্কো রুবিও তিয়ানানমেন স্কয়ার হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি চীনের সরকারকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করেন। এই মন্তব্যের জবাবে বেইজিং কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানায়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রুবিওর বক্তব্যকে ‘বেআইনি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেছে এবং জানিয়েছে, এটি চীনের সার্বভৌমত্বের প্রতি একটি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। বেইজিং একে চীন-বিরোধী অপপ্রচার বলেও মন্তব্য করে। রুবিওর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে চীনের গণমাধ্যমেও তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে।
তিয়ানানমেন স্কয়ারের প্রেক্ষাপট এবং রুবিওর দাবির মূল বক্তব্য
১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়ানানমেন স্কয়ার চীন সরকারের ইতিহাসে একটি গা শিউরে ওঠা দিন হিসেবে বিবেচিত। সে দিন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও নাগরিক গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু সে আন্দোলন দমন করতে চীন সেনাবাহিনী ট্যাংক ও অস্ত্র ব্যবহার করে। রুবিও তার বিবৃতিতে দাবি করেন, চীন এখনও সেই একই দমননীতি অনুসরণ করছে, যেখানে জনগণের মতপ্রকাশ ও বিরোধিতাকে রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে ফেলা হয়। তিনি বলেন, “চীনের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা মানুষের মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করছে, এবং এ ধরনের ইতিহাস কখনো চাপা পড়ে না।
তিয়ানানমেন স্কয়ারের প্রেক্ষাপট এবং রুবিওর দাবির মূল বক্তব্য
১৯৮৯ সালের ৪ জুন তিয়ানানমেন স্কয়ার চীন সরকারের ইতিহাসে একটি গা শিউরে ওঠা দিন হিসেবে বিবেচিত। সে দিন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও নাগরিক গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু সে আন্দোলন দমন করতে চীন সেনাবাহিনী ট্যাংক ও অস্ত্র ব্যবহার করে। রুবিও তার বিবৃতিতে দাবি করেন, চীন এখনও সেই একই দমননীতি অনুসরণ করছে, যেখানে জনগণের মতপ্রকাশ ও বিরোধিতাকে রাষ্ট্রদ্রোহের পর্যায়ে ফেলা হয়। তিনি বলেন, “চীনের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা মানুষের মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করছে, এবং এ ধরনের ইতিহাস কখনো চাপা পড়ে না।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা
এই ঘটনাটি আবারও স্পষ্ট করে দিল যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। ট্রেড যুদ্ধ, দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু, হংকং ও তাইওয়ান প্রশ্নে মতবিরোধের পর এবার মানবাধিকার ইস্যুতেও দুই দেশের উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কো রুবিওর মতো প্রভাবশালী সিনেটরের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিকে প্রভাবিত করতে পারে, যা চীনের সাথে সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলবে। চীনও এর পাল্টা কৌশল হিসেবে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দেওয়ার পথ অনুসন্ধান করছে।

ছবিঃ দ্যা ষ্টার
তিয়ানানমেন স্মরণ নিয়ে পশ্চিমা দেশের ভূমিকা
প্রতিবছর জুন মাস এলেই তিয়ানানমেন স্কয়ার গণহত্যার ঘটনা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো নানা কর্মসূচি পালন করে এবং চীন সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে। হংকংয়ে পূর্বে স্মরণ অনুষ্ঠান হতো, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেগুলোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মার্কো রুবিওর বক্তব্য এই প্রেক্ষাপটে এসেছে, যা চীনের দৃষ্টিতে পশ্চিমাদের একটি ধারাবাহিক চীনবিরোধী কৌশলের অংশ। বেইজিং এরই মধ্যে এ ধরনের অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছে।
চীনের তথ্য নিয়ন্ত্রণ ও অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ
চীনে তিয়ানানমেন স্কয়ারের ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা নিষিদ্ধ। সরকারি সেন্সরশিপের কারণে সাধারণ নাগরিকের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা অনেক কম। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলে বারবার আলোচনায় আসায় সরকার প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চীন আরও বেশি করে সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। একইসঙ্গে দেশের ভেতরে দেশপ্রেম জাগানোর লক্ষ্যে সরকার নিজস্ব ঐতিহাসিক বয়ান তুলে ধরছে এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার কথা বলে বিদেশি সমালোচনার জবাব দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ
মার্কো রুবিওর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোও মানবাধিকার ইস্যুতে চীনের সমালোচনা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘে একাধিক প্রতিনিধি এর আগেও চীনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে। কিন্তু চীন তার অবস্থানে অনড় থেকে বলেছে, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বাইরের হস্তক্ষেপ তারা সহ্য করবে না। ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে নতুন কূটনৈতিক সংঘাতের জন্ম দিতে পারে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে।