নতুন নোটের কৃত্রিম সংকট: ২০০০ টাকার বান্ডিল ৩৫০০ টাকায় বিক্রি

ঈদের আগে নতুন নোটের চাহিদা বেড়ে গেলেও ব্যাংকগুলোতে দেখা গেছে ঘাটতি। এই সুযোগে খোলা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে নতুন টাকার বান্ডিল। ছবিঃ টিবিএস
নতুন নোটের ঘাটতি ঘিরে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ
ঈদ সামনে রেখে নতুন টাকার প্রতি মানুষের আগ্রহ বরাবরের মতোই বেশি। কিন্তু চলতি বছর সেই চাহিদা পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন নোট সংকট। ব্যাংকগুলোতে গেলে দেখা যাচ্ছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। ফলে সাধারণ মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও নতুন নোট পাচ্ছেন না। অনেকেই অভিযোগ করছেন, ব্যাংক কর্মকর্তা ও দালাল চক্রের মিলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে খোলা বাজারে তা চড়া দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাত ও গলিতে ২০০০ টাকার নতুন টাকার বান্ডিল ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এই চিত্র শুধুই ঢাকাতেই নয়—চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ বড় শহরগুলোতেও একই অবস্থা। অথচ এই নোটগুলো ব্যাঙ্ক থেকেই নির্ধারিত নিয়মে সরবরাহ হবার কথা ছিল। এতে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও দালাল চক্রের গোপন যোগসাজশ
বিভিন্ন সূত্র মতে, কিছু ব্যাংক কর্মকর্তা নিজেরাই নতুন নোটের বান্ডিল গোপনে বাইরে সরবরাহ করছেন। এতে করে দালাল চক্র সহজেই সেই নোট কালোবাজারে বিক্রি করছে দ্বিগুণ দামে। ফলে সাধারণ মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ব্যাংকিং খাতের স্বচ্ছতা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। ব্যাংকগুলো এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো বক্তব্য না দিলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর ঈদের আগে নির্ধারিত কিছু ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ নতুন নোট বিতরণের নির্দেশনা দেয়। কিন্তু বাস্তবায়নে দুর্বলতা, নজরদারির অভাব এবং স্বচ্ছতা না থাকায় নিয়ম ভেঙেই চলে আসছে অবৈধ বাণিজ্য। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নোট সরবরাহ যথেষ্ট আছে, তবে মাঠ পর্যায়ে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।
খোলা বাজারে নতুন টাকার অপ্রাতিষ্ঠানিক বিক্রয় বৃদ্ধি পাচ্ছে
শুধু রিকশাচালক বা সাধারণ খুচরা বিক্রেতা নয়—এখন নানা বয়সের ও পেশার মানুষ এই ব্যবসায় জড়িত। নতুন নোটের বান্ডিল দোকানের পাশেই পলিথিনে মুড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতিটি বান্ডিলেই ৩০% থেকে ৭৫% অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এই ব্যবসা যেন অলিখিতভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।নতুন নোটের চাহিদা ঈদের সময় উপহার হিসেবে ব্যবহারের জন্য। অথচ এই নোট কিনতেই সাধারণ মানুষকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যারা ঈদের বাজেট নিয়ে আগে থেকেই চিন্তিত, তারা এই বাড়তি ব্যয়ের চাপে পড়ছেন চরম সংকটে। অনেকে বাধ্য হয়ে শিশুদের জন্য নতুন টাকা উপহার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।