নিরাপত্তা বাড়াতে সরকার সিআইএসএফকে কার্গো ও ইন-লাইন ব্যাগেজ তল্লাশির নির্দেশ দিল

দেশের বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে সিআইএসএফ-কে কার্গো এবং ইন-লাইন ব্যাগেজ তল্লাশি করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জানুন এর কারণ, প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। ছবি: পিটিআই
নিরাপত্তা বাড়াতে সরকার সিআইএসএফকে কার্গো ও ইন-লাইন ব্যাগেজ তল্লাশির নির্দেশ দিল
দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার অংশ হিসেবে ভারত সরকার সম্প্রতি সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (CISF)-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এবার থেকে বিমানবন্দরে কার্গো ও ইন-লাইন ব্যাগেজ তল্লাশি করার দায়িত্বও পালন করবে সিআইএসএফ। সরকারের এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা ঝুঁকি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার উচ্চ প্রস্তুতি।
সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ ও প্রেক্ষাপট
গত কয়েক মাসে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা, নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনা এবং দেশে-বিদেশে চলমান জিওপলিটিক উত্তেজনা ভারতের বিমানবন্দর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। বিশেষ করে কার্গো ও ইন-লাইন ব্যাগেজের মাধ্যমে অস্ত্র, বিস্ফোরক বা নিষিদ্ধ সামগ্রী পাচারের আশঙ্কা অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিকে মাথায় রেখেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শুধুমাত্র বিমানবন্দরের নির্ধারিত নিরাপত্তা কর্মীরা নয়, বরং বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সশস্ত্র সিআইএসএফ সদস্যরাও এখন থেকে ব্যাগেজ তল্লাশির কাজ করবেন।
সিআইএসএফ-এর নতুন দায়িত্ব
সিআইএসএফ মূলত শিল্প ও অবকাঠামো নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলেও, বর্তমানে তারা দেশের প্রধান বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তার মূল দায়িত্বও পালন করছে। কার্গো ও ইন-লাইন ব্যাগেজ তল্লাশির কাজ যুক্ত হওয়ার ফলে এখন তাদের দায়িত্বের পরিধি আরও বেড়ে গেল।
এখন থেকে বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে বা বোর্ডিং এর পূর্ব মুহূর্তে যাত্রীদের লাগেজ, প্যাকেট, পার্সেল, এমনকি কুরিয়ার সামগ্রীতেও সিআইএসএফ সরাসরি তল্লাশি চালাতে পারবে। এতে করে সন্দেহভাজন পণ্য বা ব্যক্তিকে দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য পরিবর্তন
এই নতুন নির্দেশনার কারণে দেশের প্রধান বিমানবন্দরগুলোর কার্যপ্রণালীতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। যেমন:
- স্ক্যানিং পয়েন্ট বাড়ানো: ইন-লাইন ব্যাগেজ স্ক্যানিংয়ের জন্য অতিরিক্ত মেশিন ও জনবল প্রয়োজন হতে পারে।
- যাত্রীদের অপেক্ষার সময় বাড়া: সিআইএসএফের বিস্তারিত তল্লাশির কারণে সময় কিছুটা বাড়তে পারে।
- কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণ: বড় আকারের মালামাল এখন আরও সতর্কতার সঙ্গে যাচাই হবে।
তবে, এই পরিবর্তনগুলি যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
জনসাধারণ ও বিমান সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া
সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে এই নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একদিকে অনেকে বলছেন, এতে তাদের যাত্রা আরও নিরাপদ হবে, অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, এতে যাত্রার সময় এবং ঝামেলা বাড়বে।
বিমান সংস্থাগুলোও বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, যাতে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে যাত্রীসেবা ব্যাহত না হয়। বেশ কয়েকটি সংস্থা ইতিমধ্যেই তাদের ভ্রমণ নির্দেশিকায় নতুন আপডেট যোগ করেছে।
ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ব্যবস্থা আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে কিছু নির্দিষ্ট বিমানবন্দরে চালু হবে। সফল হলে ধাপে ধাপে দেশের সব আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে এটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এছাড়া, ভবিষ্যতে আরও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে স্ক্যানিং ও তল্লাশির গতি এবং নির্ভুলতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।
সাম্প্রতিক নিরাপত্তা ঝুঁকি মাথায় রেখে ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী। সিআইএসএফ-এর মাধ্যমে কার্গো ও ইন-লাইন ব্যাগেজ তল্লাশি চালানোর নির্দেশনা দেশের বিমানবন্দর নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করবে। যদিও এতে কিছুটা অস্বস্তি বা বিলম্ব হতে পারে, তবে জননিরাপত্তার স্বার্থে এটি একান্ত প্রয়োজনীয়।