নির্বাচন আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে হতে পারে

বিএনপির আমীর খসরু বলেছেন, নির্বাচন আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে হতে পারে। বিস্তারিত জানুন রাজনীতিক বিশ্লেষণ, বিরোধী দলের প্রস্তুতি ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার]
আমীর খসরুর মন্তব্যের প্রেক্ষাপট
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাম্প্রতিক এক রাজনৈতিক আলোচনা সভায় বলেছেন, দেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তার এই মন্তব্য রাজনীতির ময়দানে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সরকারের পদক্ষেপ ও প্রশাসনিক চলাফেরার উপর ভিত্তি করে এই সময়সীমা অনুমান করা হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের সাম্প্রতিক কার্যক্রম, প্রশাসনের নানা ধরণের প্রস্তুতি এবং কিছু নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যস্ততা দেখে মনে হচ্ছে নির্বাচন এগিয়ে আনা হতে পারে। এই সময়সীমার কথা বললেও তিনি এটিকে নিশ্চিত নয় বরং একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রস্তুতির আভাস
বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক অস্থিরতা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপি। তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চেয়ে একাধিকবার রাস্তায় নেমেছে। আমীর খসরুর মতে, এই রাজনৈতিক উত্তেজনা সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে। এছাড়া, প্রশাসনের ভেতরে থেকেও নানা তথ্য পাচ্ছে বিরোধী দল, যা ইঙ্গিত দেয় নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসক এবং ইউএনওদের সরিয়ে নতুন করে পদায়ন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ইভিএম প্রস্তুতি—সব মিলিয়ে বোঝা যায় যে নির্বাচন এগিয়ে আনা হতে পারে।
সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় এবং তারা রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছে। আমীর খসরু বলেন, “যদি সরকার সত্যিই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়, তাহলে কেন এখনো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করছে না?” তিনি অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচি দমন করা হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী। তিনি আরও বলেন, জনগণের চোখে নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ, যার ফলে জনগণ আগাম নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান। সরকার যদি স্বচ্ছতার পথে চলতে চায়, তাহলে সংলাপ ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ খুলে দিতে হবে।
বিরোধী দলের প্রস্তুতি ও কৌশল
বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সম্ভাব্য নির্বাচনের জন্য নানা কৌশল গ্রহণ করছে। দলীয় পর্যায়ে ব্যাপক মিটিং, কর্মশালা ও কর্মসূচির মাধ্যমে প্রার্থীদের মাঠে নামানোর পরিকল্পনা চলছে। আমীর খসরু বলেন, “আমরা আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করছি, প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু রেখেছি এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করছি।” পাশাপাশি, তারা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। বিএনপি মনে করছে, সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পেলে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে। এছাড়া তারা সোশ্যাল মিডিয়া, স্থানীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশ এবং গোপন জরিপ চালিয়ে জনমত যাচাই করছে।

ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন
আন্তর্জাতিক চাপ ও পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যবেক্ষণের মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ ইতোমধ্যেই আগাম নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমীর খসরুর মতে, “আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় অবস্থান একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করতে পারে।” গত কয়েক মাসে বিভিন্ন বিদেশি কূটনীতিক নির্বাচন কমিশন, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এসব বৈঠকের মাধ্যমে প্রমাণ হয়, আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনের আহ্বান
বিএনপির পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছাড়া দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমীর খসরু বলেন, “বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে আরেকটি নাটক মঞ্চস্থ হলে দেশের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হবে।” তিনি জনগণকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান এবং বলেন, “এখনই সময় দেশের জনগণকে ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে হবে।” তিনি মনে করেন, জনগণের সরব উপস্থিতি এবং দেশব্যাপী গণজাগরণ ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। বিএনপি এখন তৃণমূল পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে যাতে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে সরকার চাপে পড়ে যায়।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত
সর্বশেষে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কাজ শুধু সময়সূচি ঘোষণা নয়, বরং একটি নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য পরিবেশ তৈরি করাও তাদের দায়িত্ব।” তিনি মনে করেন, কমিশনের উচিত জনগণকে সঠিক তথ্য জানানো, প্রার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্ব দূর করা। কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা না করা হলেও, কিছু প্রস্তুতি ও কথাবার্তা থেকে নির্বাচন এগিয়ে আসার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আমীর খসরু আশাবাদী, জনগণের চাপ এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের কারণে নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।