ইসি এখন সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নয়, বিএনপির অফিসে পরিণত হয়েছে

নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তীব্র অভিযোগ তুলেছেন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ইসি এখন আর সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নয়, এটি কার্যত বিএনপির অফিসে পরিণত হয়েছে। পড়ুন বিস্তারিত বিশ্লেষণ। ছবিঃ প্রথম আলো
ইসি আর সংবিধানিক সংস্থা নয়: পাটওয়ারীর তীব্র সমালোচনা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন পাটওয়ারী। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) বর্তমানে আর কোনো সংবিধানিক সংস্থা নয়, বরং তা বিএনপির অফিসে রূপ নিয়েছে। তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। পাটওয়ারীর অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডে এখন নিরপেক্ষতা বা স্বচ্ছতার কোনও ছাপ নেই। এটি যেন এক দলীয় মনোভাব নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের সিদ্ধান্তগুলো বিএনপির স্বার্থে বারবার কাজে লাগছে। এই অবস্থায় দেশের গণতন্ত্র যে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে, তা নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্র এবং নিরপেক্ষ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে সেই নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা নিয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে। পাটওয়ারীর মতে, কমিশনের আচরণে যে পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব দেখা যাচ্ছে, তা দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলুষিত করছে। তিনি বলেন, ইসি কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করলে জনগণের আস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ কমে যাবে। অতীতের নির্বাচনগুলোতেও এমন আচরণ দেখা গেছে, যেখানে ভোট গ্রহণের আগে থেকেই অভিযোগ উঠেছে পক্ষপাতিত্বের। ফলে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া এক অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিএনপির প্রতি ইসির একপক্ষীয় ঝোঁক: বাস্তবতা না কৌশল?
পাটওয়ারীর অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে ইসির প্রতি বিএনপির কথিত প্রভাব। তিনি দাবি করেন, বর্তমানে ইসি যেভাবে কাজ করছে তা যেন বিএনপির নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীদের প্রতি বিশেষ সুবিধা প্রদান, ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া, এবং পক্ষপাতদুষ্ট তত্ত্বাবধানে নির্বাচন আয়োজন – এইসব ঘটনা একত্রে প্রমাণ করে যে ইসি আর নিরপেক্ষ নেই। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসিকে ঘিরে এ ধরনের বিতর্ক দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই অভিযোগের গভীরতা
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাটওয়ারীর অভিযোগ নিছক রাজনৈতিক কৌশল নাকি বাস্তব উদ্বেগ – তা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ নির্বাচন কমিশন যে কোনো নির্বাচনের চালিকাশক্তি। এর স্বচ্ছতা, কার্যকরীতা ও নিরপেক্ষতা না থাকলে দেশে গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। অতীতের মতো আবার যদি বিতর্কিত নির্বাচন হয়, তাহলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের অবস্থান প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। এছাড়া, ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে বিশ্বাস সংকট তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।

ছবিঃ মনেও এইজ
জনমতের প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
পাটওয়ারীর বক্তব্য জনসাধারণের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করছেন, নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বারবার উঠছে, অথচ কার্যকর কোনো পরিবর্তন আসছে না। কেউ কেউ মনে করছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের ফলে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসির কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন না করা হলে এই অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে।
নির্বাচন কমিশনের ভবিষ্যৎ: করণীয় ও সংস্কার
বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজন গঠনমূলক সংস্কার। নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নিয়োগে আরও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকা, এবং জনসচেতনতার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই একে নিরপেক্ষ সংস্থায় রূপান্তর করা সম্ভব। শুধু কাগজে কলমে নয়, বাস্তবে ইসির সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। পাটওয়ারীর মতো রাজনীতিকদের অভিযোগ তখনই মূল্য পাবে, যখন সেগুলোর ভিত্তিতে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
ইসি যেহেতু একটি সংবিধানিক সংস্থা হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা, সেহেতু এর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দেশের গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। ভোটাররা যদি মনে করেন যে কমিশন নিরপেক্ষ নয়, তাহলে নির্বাচন ব্যবস্থার উপর থেকে তাদের বিশ্বাস উঠে যাবে। পাটওয়ারীর বক্তব্য আমাদের এটাই মনে করিয়ে দেয় যে, গণতান্ত্রিক কাঠামো রক্ষায় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ।
সংবিধানের মর্যাদা রক্ষায় ইসির নিরপেক্ষতা জরুরি
পাটওয়ারীর অভিযোগ শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং এটি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোর প্রশ্ন। নির্বাচন কমিশন যদি রাজনৈতিক প্রভাবে চলে, তাহলে সংবিধানের স্পষ্ট নির্দেশনাকেও অগ্রাহ্য করা হয়। তাই আজ প্রয়োজন ইসিকে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। পাটওয়ারীর বক্তব্য সেই পরিবর্তনের দাবি তোলে, যা দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে।