নির্বাচন কমিশনের জন্য ২,৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ

বাংলাদেশ নির্বাচন প্রস্তুতি

২০২৫ সালের জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জন্য ২,৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জানুন এই অর্থ কীভাবে ব্যয় হবে এবং এর গুরুত্ব কী। ছবিঃ ডেইলি ষ্টার

নির্বাচন কমিশনের জন্য বিপুল বরাদ্দ ঘোষণা

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন কমিশনের জন্য ২,৯৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। এটি একাধারে নির্বাচন কমিশনের সামগ্রিক প্রস্তুতি, কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বরাদ্দ আগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গত বাজেটের তুলনায় এবারের বরাদ্দে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, যা কমিশনের প্রতি সরকারের অগ্রাধিকারের ইঙ্গিত বহন করে।

বাজেটের খাতভিত্তিক বণ্টন ও ব্যবহার পরিকল্পনা

নির্বাচন কমিশনের এই বরাদ্দকৃত অর্থ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচন উপকরণ ক্রয়, ব্যালট পেপার ও বাক্স প্রিন্টিং, লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা, নির্বাচন পরিচালনার জন্য অস্থায়ী জনবল নিয়োগ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিশনের কার্যালয়সমূহে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, অবজারভেশন মিশন পরিচালনা, যানবাহন ভাড়া ও নির্বাচনী প্রচারণা সংক্রান্ত নীতিমালাও বাজেট ব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত। এই বরাদ্দ সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সময়মতো নির্বাচন নিশ্চিত করতে কমিশনকে সক্ষম করে তুলবে।

প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিকল্পনা

বর্তমান বিশ্বে নির্বাচন পরিচালনায় প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে, এবং বাংলাদেশও সেই পথে এগোচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের বাজেটের একটি বড় অংশ এবার প্রযুক্তি খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। EVM (Electronic Voting Machine) ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, ডিজিটাল ভোটার তালিকা হালনাগাদ, তথ্য সংরক্ষণের জন্য আধুনিক সার্ভার স্থাপন এবং নির্বাচন কেন্দ্র পর্যায়ে রিয়েল-টাইম ফলাফল পরিবেশন ব্যবস্থা উন্নয়নে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে দ্রুত এবং নির্ভুল ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হবে, যা নির্বাচন নিয়ে জনমনে আস্থা সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে।

নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন, তাদের দক্ষতা ও পেশাগত প্রশিক্ষণের দিকে এবার বেশি নজর দেওয়া হয়েছে। এই বাজেটের অংশ হিসেবে কমিশন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে আধুনিক কোর্স চালু করবে, মাঠপর্যায়ে অবজারভেশন এবং মূল্যায়ন টিম গঠন করবে এবং দেশজুড়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ চালু রাখবে। পাশাপাশি প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও কর্মীদের বেতন-ভাতাও এই বাজেটের আওতায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

নির্বাচন কমিশন

ছবিঃ ডেইলি ষ্টার বাংলা

জাতীয় নির্বাচন ২০২৬: এই বাজেটের মূল লক্ষ্য

২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই মূলত এই বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যেখানে সময়মতো ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আসন পুনর্বিন্যাস, ভোটকেন্দ্র পুনর্নির্ধারণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই বরাদ্দের মাধ্যমে সব কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত হবে, যা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করবে।

স্বচ্ছতা ও ব্যয় নিরীক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা

বাজেটের টাকা যেন কোনোভাবেই অপব্যবহার না হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশন থেকে একটি কঠোর নিরীক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। প্রতিটি ব্যয়ের রেকর্ড রাখা, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ এবং আর্থিক প্রতিবেদন তৈরিতে দক্ষ জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনী তহবিল ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি জনসাধারণের আস্থা বজায় রাখবে।

বাজেট বরাদ্দ নিয়ে প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

এই বরাদ্দ নিয়ে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও বিশ্লেষকদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। তবে তারা এও বলছেন, কেবল বরাদ্দই যথেষ্ট নয়—এই অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। অনেকেই কমিশনের উপর আস্থা রেখে বলছেন, বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আগামীতে সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *