নীতিগত ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে মুদ্রাস্ফীতি ৪-৫% এ নামিয়ে আনা সম্ভব: গভর্নর

মুদ্রানীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, সঠিক নীতিমালার ধারাবাহিক প্রয়োগ থাকলে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব। বিস্তারিত জানতে পড়ুন সম্পূর্ণ প্রতিবেদন। ছবি: টিবিএস

বর্তমান প্রেক্ষাপট: মুদ্রাস্ফীতির চাপ ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

বাংলাদেশ বর্তমানে বেশ কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি অন্যতম। দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ এবং আমদানিনির্ভরতা—সব মিলিয়ে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব পড়ছে। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৯ শতাংশের কাছাকাছি, যা সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়।

গভর্নরের বক্তব্য: নীতিগত ধারাবাহিকতায় সংকট মোকাবেলার আশাবাদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, “যদি আমরা আমাদের নীতিমালায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি, তাহলে মুদ্রাস্ফীতির হার ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব।” তার মতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে সুস্পষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির সমন্বয়, এবং আমদানি-রপ্তানি ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা যেতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত উদ্যোগ

বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন:

  • সুদহার নির্ধারণে ফ্লোর রেট পদ্ধতির পরিবর্তন,
  • মুদ্রানীতির মাধ্যমে বাজারে মুদ্রার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ,
  • ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম হ্রাসে কঠোর মনিটরিং,
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনে রপ্তানি উৎসাহ।

এই নীতিগুলো যদি ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, তাহলে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে অর্থনীতিবিদরাও মত দিয়েছেন।

বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনার উপায়

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুদ্রাস্ফীতির প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ সম্ভব তখনই, যখন জনগণের মাঝে বাজারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরে আসে। এজন্য প্রয়োজন:

  • স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা,
  • দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পিত নীতিমালা অনুসরণ,
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও মিডিয়া অংশগ্রহণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি নিয়মিত বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আশার আলো আছে, প্রয়োজন সঠিক প্রয়োগ

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও অনেক সম্ভাবনাময়। গভর্নরের বক্তব্যে আশার সুর স্পষ্ট, তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নীতির ধারাবাহিকতা ও প্রশাসনিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও জনগণের জন্য কার্যকর নীতি গ্রহণ করলেই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ৪-৫ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি অর্জন কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকেও একটি বড় পদক্ষেপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *