বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ রাখি: পরিবেশ রক্ষায় আমাদের দায়িত্ব

পরিবেশ রক্ষা

বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ রাখতে আমাদের কী করণীয়? পরিবেশ রক্ষায় ব্যক্তি ও সমাজের দায়িত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এই প্রতিবেদনে। ছবিঃ প্রথমআলো

বাংলাদেশের পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়ন: সময়ের দাবি

বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর দেশ। এর নদ-নদী, বনাঞ্চল, মাঠ-ঘাট ও পাহাড়-পর্বত এক অপার সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, নগরায়ন এবং শিল্পায়নের ফলে এই প্রকৃতি আজ হুমকির মুখে। তাই সময় এসেছে সবাই মিলে উদ্যোগ নেওয়ার—বাংলাদেশকে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ রাখার। এটি শুধু সরকারের নয়, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব।

পরিবেশ দূষণের ভয়াবহ প্রভাব

বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোতে বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চেয়েও অনেক বেশি। জলবায়ু পরিবর্তন, দূষিত পানি, পলিথিনের ব্যবহার এবং অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আমাদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুদের রোগপ্রবণতা বেড়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব সমস্যা মোকাবেলায় পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়ন অত্যাবশ্যক।পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে আমাদের ঘর থেকেই। আমরা যদি নিজ নিজ বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখি, ময়লা যেখানে-সেখানে না ফেলি এবং ডাস্টবিন ব্যবহার করি, তবে একটি পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়ে উঠবে। ছোট ছোট এই অভ্যাসগুলোই গড়বে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের ভিত।

একটি গাছ মানেই একটি প্রাণ। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, পরিবেশকে ঠাণ্ডা রাখে, ও বৃষ্টিপাত বাড়ায়। তাই স্কুল, কলেজ, অফিস বা বাসার আঙিনায় বৃক্ষরোপণ করা আমাদের নৈতিক কর্তব্য। সরকারিভাবেও প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, কিন্তু সাধারণ জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এই উদ্যোগ সফল হবে না।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা অপরিহার্য

পরবর্তী প্রজন্মই পরিবেশের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের ছোটবেলা থেকেই পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব শেখানো উচিত। স্কুলে প্রতিটি শ্রেণিতে “পরিবেশ শিক্ষা” বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা যদি পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ছোট ছোট দায়িত্ব নেয়, যেমন—পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখা, কাগজ যেখানে-সেখানে না ফেলা, গাছের পরিচর্যা করা—তবে তাদের অভ্যাস তৈরি হবে। পাশাপাশি নানা ধরণের প্রতিযোগিতা, নাটিকা বা পোস্টার প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব।

প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা

বর্তমানে সামাজিক মাধ্যম আমাদের জীবনের বড় একটি অংশ হয়ে উঠেছে। পরিবেশ রক্ষা নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক্স, পোস্ট এবং চ্যালেঞ্জ চালু করে তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা যায়। TikTok, Instagram, Facebook ও YouTube-এর মত প্ল্যাটফর্মে “পরিচ্ছন্নতা চ্যালেঞ্জ” বা “বৃক্ষরোপণ ভিডিও” দিয়ে আমরা জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি। অনেক সময় একটি ভাইরাল ভিডিও সমাজে অভাবনীয় প্রভাব ফেলে। তাই পরিবেশ রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দিতে প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক ব্যবহার করা এখন সময়ের দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *