পাকিস্তানি হামলায় ১৩ ভারতীয় নিহত, আহত ৫৯

ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ,

গত বুধবার থেকে ভারতের সীমান্ত অঞ্চলে পাকিস্তানের গুলিতে ১৩ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও ৫৯ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগ্রহ

সংঘর্ষের শুরু ও ভারতীয় দাবি

গত বুধবার থেকে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এলওসি (লাইন অব কন্ট্রোল) পার হয়ে ভারতের বেসামরিক এলাকায় টানা গুলি ও মর্টার হামলা চালাচ্ছে। এর ফলে অন্তত ১৩ জন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৫৯ জন। ভারতীয় সেনাবাহিনী এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সীমান্তবর্তী জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে এই হামলাগুলো সংঘটিত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি ও স্থানীয়দের অবস্থান

সীমান্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে এই হামলার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং অনেক পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গুলিবর্ষণের সময় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করলেও তা যথেষ্ট নিরাপদ ছিল না। আহতদের মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। এই পরিস্থিতিতে এলাকার স্কুল, বাজার ও অন্যান্য জরুরি সেবাও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

ভারতের প্রতিক্রিয়া ও সামরিক প্রস্তুতি

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পাকিস্তানের এই ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক নীতিমালার চরম লঙ্ঘন। ভারতীয় সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে যে, পাকিস্তান নিয়মিতভাবে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করছে।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ও দোষারোপ পাল্টা দোষারোপ

অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ভারতই প্রথমে হামলা চালিয়েছে এবং তাদের পক্ষ থেকে কেবল প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান বলছে, তাদেরও কয়েকজন নাগরিক ও সেনা সদস্য হতাহত হয়েছে। এই দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের কারণে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। দুই দেশের সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছে, তবে সম্প্রতি তা আরও বেড়েছে।

সীমান্ত হামলা

ছবি: সিএনএন

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ

এই সংঘর্ষে বেসামরিক প্রাণহানির বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে এসেছে। জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উভয় দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি হচ্ছে সীমান্তবর্তী সাধারণ মানুষ। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতিকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছে।

উত্তেজনার ভবিষ্যৎ প্রভাব ও দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা

ভারত ও পাকিস্তানের এই ধরনের সামরিক উত্তেজনা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। দুই দেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র থাকার কারণে আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। যদি এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে তা বৃহত্তর সংঘাতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে দুই দেশকে সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথে অগ্রসর হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *