পোর্ট সুদানে টানা হামলার ফলে পানির অভাব ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা

সুদানে বিদ্যুৎ সংকট

সুদানের বন্দর শহর পোর্ট সুদান টানা এক সপ্তাহের সহিংসতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পানি ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম সংকট। ছবি: বিবিসি

এক সপ্তাহের সহিংসতায় বন্দর শহরে বিপর্যয়

সুদানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর পোর্ট সুদান বর্তমানে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। গত এক সপ্তাহের টানা সহিংস হামলা ও সংঘর্ষের ফলে শহরের জীবনযাত্রা কার্যত স্থবির হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ, পাশাপাশি পানির লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় বাসিন্দাদের জন্য দৈনন্দিন জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, হাসপাতাল ও খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্রগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণ।

পানি সংকটে ধুঁকছে হাজারো মানুষ

পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় হামলার ফলে শহরের বহু অঞ্চল এখন পানিশূন্য অবস্থায় রয়েছে। মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে কোনো একটি পানির ট্রাকের জন্য। বিভিন্ন এলাকায় পানির জন্য মারামারির ঘটনাও ঘটছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু পরিবার দূরবর্তী অঞ্চলের কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে, যা সময় ও শ্রমসাধ্য।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় পোর্ট সুদানে অন্ধকার নেমে এসেছে। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও জরুরি সেবাকেন্দ্রগুলো জেনারেটরের ওপর নির্ভর করলেও জ্বালানির অভাবে সেগুলোও আর সচল রাখা যাচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, ব্যাংকিং ও অনলাইন যোগাযোগ পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে বিকল। টেলিকম নেটওয়ার্কও দুর্বল হয়ে পড়ায় অনেকেই প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। ফলে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে নগরবাসীর।

খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি

অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে খাদ্য, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। শহরে বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ, এবং যা খোলা আছে সেগুলোতে পণ্য না থাকায় মূল্য কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যথার ওষুধ পর্যন্ত কিছুই সহজলভ্য নয়। খাদ্য সংকটে অনেক পরিবার দিনের পর দিন একবেলা খেয়ে কাটাচ্ছে, অনেকে আবার আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছে না পর্যাপ্ত সেবার অভাবে।

মানবিক সহায়তার দাবি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই পোর্ট সুদানে জরুরি সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, শহরের পরিস্থিতি দ্রুতই এক গভীর মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হতে পারে যদি জরুরি ভিত্তিতে সহায়তা না পাঠানো হয়। তবে চলমান সহিংসতার কারণে মানবিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সুদান সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে বলে দাবি করলেও বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। এখনো পুরোপুরি কোনো সুরক্ষা বাহিনী শহরে মোতায়েন হয়নি, ফলে জনসাধারণ এক প্রকার নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ পরিস্থিতিকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অবিলম্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

পোর্ট সুদানে চলমান সংকট সুদানের সামগ্রিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতারই প্রতিফলন। একদিকে জাতিগত সংঘর্ষ, অন্যদিকে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত কোনও স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান না হলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও একই ধরনের সংকট ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা গোটা অঞ্চলকে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতায় ঠেলে দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *