জাপান সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

নির্বাচন ব্যবস্থাপনা

নির্বাচনী অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে জাপান সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সফরে নির্বাচন পরিচালনা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসসি

সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্প্রতি সরকারি সফর শেষ করে দেশে ফিরে এসেছেন। এই সফরটি ছিল জাপানের উন্নত নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এবং প্রযুক্তিগত দিকগুলো শেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশন। বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, নিরাপদ ও আধুনিকায়িত করার লক্ষ্যে এই সফরকে বড় মাপের একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সফরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “জাপানে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে ধরনের প্রযুক্তি ও স্বচ্ছতা দেখেছি, তা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয়। আমরা সেই অভিজ্ঞতাকে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।

সফরের মূল উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল জাপানের নির্বাচন ব্যবস্থার আধুনিক প্রযুক্তি ও সফল অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণ করা। জাপান বিশ্বের অন্যতম সেরা নির্বাচনী ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ভোটারদের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশেও ভোটারদের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এমন আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। সফরের সময় নির্বাচন কমিশনার জাপানের বিভিন্ন নির্বাচন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার, এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তিনি জানিয়েছেন, এই সফর বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও কর্মশালা

জাপানে সিইসি ও তাঁর সফরসঙ্গীরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে ভোটগ্রহণের বিভিন্ন দিক যেমন ভোটার তালিকা তৈরি, ভোটাধিকার রক্ষা, ভোটগ্রহণের সময় প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ভোটের নিরাপত্তা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বিশেষ করে, জাপানের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (EVM) ব্যবহার এবং সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈঠকে জাপানের নির্বাচনী আধিকারিকরা বাংলাদেশে প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমাদের দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জাপানের এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সহায়ক হবে।

জাপানের নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্ভাবনা

জাপানের নির্বাচন ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তাদের সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার। বাংলাদেশও ধীরে ধীরে এসব পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে বলে নির্বাচনী কর্মকর্তারা মনে করেন। বাংলাদেশে ভোটারদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, তাই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও দ্রুত করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সফর শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা দেশের প্রেক্ষাপটে কিছু প্রযুক্তি প্রয়োগের পরিকল্পনা করছি যা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গতি বাড়াবে। এর ফলে জনগণের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসও বেড়ে যাবে।” তিনি আরও বলেন, “এই সফর আমাদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

নির্বাচন অভিজ্ঞতা

ছবিঃ ডেইলি সুন্

সফরে অংশ নেওয়া অন্যান্য কর্মকর্তাদের ভূমিকা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও সফরে অংশ নেন নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধিরা। তারা বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা ও ওয়ার্কশপে অংশ নিয়ে জাপানের নির্বাচনী প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়ার সঙ্গে পরিচিত হন। এই দলের সদস্যরা দেশে ফিরে যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তা প্রয়োগ করে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সফরে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানান, এই সফর একটি শিক্ষা সফর হিসেবে অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় নতুন দিক নির্দেশনা যোগাবে।

গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার জোরদারে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অঙ্গীকার

দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষা ও উন্নত নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা। জাপান সফর শেষে তিনি বলেন, “নির্বাচনে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও নিরাপদ করতে হবে। ভোটারদের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের অগ্রাধিকার।” ভবিষ্যতে ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং ভোটের মান উন্নত করতে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নির্বাচনে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে—এটাই এই সফরের একটি বড় শিক্ষা। সিইসি জানান, বাংলাদেশ ধাপে ধাপে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন এবং অনলাইন ভোটার নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পাশাপাশি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুল কমানো এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া, ভোটগ্রহণের সময় সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষার জন্য জোরদার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “সরকার এবং জনগণের সহযোগিতায় আমরা এই প্রযুক্তিগত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে সফল হবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *